প্রয়াত হলেন কবি দেবারতি মিত্র। বৃহস্পতিবার ১১ জানুয়ারি ভোর ৩টায় কলকাতার বাসভবনে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন বলে জানা গেছে।
কবি দেবারতি মিত্রের জন্ম ১২ এপ্রিল ১৯৪৬, প্রয়াণ ১১ জানুয়ারি ২০২৪। দেবারতি মিত্রের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। পিতা অজিত কুমার মিত্র এবং মাতা গীতা মিত্র। দেবারতির পড়াশোনাও কলকাতায়। যোগমায়া দেবী কলেজে পড়াশোনার পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন। এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।
বালিকা বয়স থেকেই দেবারতির কবিতাচর্চা শুরু হয় এবং তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কৃত্তিবাস পত্রিকায়। আর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দের কবিতা এবং পাশাপাশি কিটস ও এলিয়টের কবিতার সঙ্গে তিনি প্রাথমিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি তার কবিতায় ক্ষেত্র বিশেষে প্রাণবন্ত রূপকের ব্যবহার করেছেন যা পাঠক মহলে প্রসংশিত হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি আটটি কবিতা সংকলন প্রকাশ করেছেন। কাব্যগ্রন্থগুলিতে তার নিজস্ব ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে, বিষয় ও শৈলি আধুনিক বাংলা সাহিত্যে এক স্বতন্ত্র স্থান অর্জন করেছে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ অন্ধস্কুলে ঘন্টা বাজে প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে।
তার রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থ :
অন্ধ স্কুলে ঘন্টা বাজে (১৯৭৪), শতরূপা, কলকাতা
আমার পুতুল (১৯৭৪), শতরূপা, কলকাতা
যুবকের স্নান (১৯৭৮), আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা
ভূতেরা ও খুকি (১৯৮৮), আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা
কবিতা সমগ্র (১৯৯৫), আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা
তুন্নুর কম্পিউটার (২০০০), আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা
শ্রেষ্ঠ কবিতা দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা
খোঁপা ভরে আছে তারার ধুলোয় (২০০৩), আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা
দেবারতি মিত্রের প্রথম প্রকাশিত চারটি কবিতা সংকলনের কবিতা ইংরাজীতে দুটি গ্রন্থে অনূদিত হয়েছে-
ইন দেয়ার ওউন ভয়েস : দ্য পেঙ্গুইন অ্যান্থোলজি অফ কনটেমপোরারি ইন্ডিয়ান ওমেন পোয়েটস্ (১৯৯৩), পেঙ্গুইন বুকস্ ইন্ডিয়া
ম্যাজেস্টিক নাইটস : লাভ পোয়েমস্ অফ বেঙ্গলি ওমেন (২০০৮), হোয়াইট পাইন প্রেস
সম্মাননা
১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে দেবারতি মিত্র কবিকৃতির জন্য লাভ করেন কৃত্তিবাস পুরস্কার
১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের পান আনন্দ বাজার গোষ্ঠীর সাহিত্য পুরস্কার আনন্দ পুরস্কার
২০১৪ খ্রিস্টাব্দের পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার
২০০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি জাতীয় কবি নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি কবি ও গদ্যকার মণীন্দ্র গুপ্তকে (১৯২৬-২০১৮) বিবাহ করেন।
দেবারতি মিত্রের দুটি কবিতা
বাকি সময়টা
ঘন নীলাঞ্জন রঙের ঘরে দুজনে থাকি
সরস্বতীর বাজনার মতো পুঞ্জ পুঞ্জ আলো–
বাইরের জগৎ, ভিতরের জগৎ বলে আলাদা কিছু নেই।
সবই আমাদের নিজেদের।
রোগ-শোক-মৃত্যু কি তাহলে আমাদের স্পর্শ করে না?
গোলাপ রজনীগন্ধার ঘ্রাণ টের পাই না?
কষ্ট আনন্দ যেন অবিচ্ছিন্ন সাথি,
আমাদের মর্ম আমাদের জীবনাতীত শিল্প।
ঠিক করেছি, জিজ্ঞাসা নয়,
এই সব নিয়েই কাটিয়ে দেব দুজনেই।
ঘন নীলাঞ্জন বর্ণ আর সরস্বতীর বাজনার পুঞ্জ পুঞ্জ আলো।
একটা অবকাশ
মেরি বিস্কুটের মতো গোল চাঁদটাকে
চায়ে ডুবিয়ে দুজনে অনায়াসে খেতে পারতাম–
কিন্তু ওসব করতে যাই না।
সারা জীবন ধরে কত ফুল ফোটালাম, ফল ফলালাম,
এখন সে সময় আমরা পার হয়ে এসেছি।
রামধনু রঙের পাখির ডাক শুনলেও
এখন গা শিরশির করে না।
কারণ আমাদের যত শব্দ, যত দৃশ্য
সবই ভিতরে ভিতরে বেজে যাচ্ছে, ফুটে উঠছে।
অন্তরের চেয়েও গোপন একটা দেশ
আমরা স্বামী-স্ত্রী আবিষ্কার করেছি।
স্বপ্নও তার কাছে আশ্চর্য।
একটা অবকাশ আমরা খুঁজে পেয়েছি
তার কথা কখনও কাউকে জানাব না।
খুলনা গেজেট/ টিএ