আগামী ইউপি নির্বাচনে নিজের আধিপত্য ধরে রাখা ও সংসদ নির্বাচনে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. সুজিত অধিকারীর পক্ষে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের পোস্টারিংয়ের কারণে আনছার শেখকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা মামলায় ছেলে তানভীর শেখের এজাহারে এমন দাবি করা হয়েছে।
এজাহারেদাবি করা হয়েছে, মামলার ১ নং আসামী পাভেল গাজী অন্যান্য আসামীদের আমার পিতাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। আমার পিতা শেখ আনছার আলী (৬০) দিঘলিয়া থানাধীন ২ নং বারাকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। কিছু ভোটে আমার পিতা প্রতিপক্ষের নিকট পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও জনগণের নিকট আমার পিতার জনপ্রিয়তা বিজয়ী চেয়ারম্যানের চাইতে অনেকগুণ বেশী। আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করলে আমার পিতার বিজয় সুনিশ্চিত। নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান ১নং আসামী পাভেল গাজী (৩২) সহ এজাহারে উল্লেখিত আসামীরা আমার পিতাকে হত্যা করার জন্য বার বার হামলা করে। আসামিদের হামলা থেকে বাঁচার জন্য আমার পিতা খানজাহান আলী থানাধীন পূর্ব শিরোমনি শেখ আইয়ুব আলীর বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে গোপনে বসবাস করতো।
আমার পিতা এড. সুজিত অধিকারীর পক্ষে খুলনা -৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের পোস্টার টানালে আসামীরা আমার পিতার উপর ক্ষিপ্ত হয়। তারা তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য ১নং আসামী অন্যান্যদের নির্দেশ দেয়। এলাকার সাঁটানো ওই পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। তারই জের ধরে ১৭ মার্চ আমার পিতা আমাদের গ্রামের বাড়ি দিঘলিয়া থানাধীন বারাকপুর বেড়াতে গেলে ১নং আসামীর নেতৃত্বে অন্যান্য আসামীরা আমার পিতার উপর হামলা করে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় আমার পিতা ভাড়াটিয়া বাড়িতে চলে আসে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৪ মার্চ দুপুর ২ টা ০৫ মিনিটের সময় লিয়াকত খানের বাড়ির সামনে পাঁকা রাস্তার উপর পৌঁছালে পূর্ব হইতে ২, ৩ ৪, ৭, ৮ নং আসামীরা লিয়াকত খানের বাড়ির আশেপাশে অবস্থান করে। ৫, ৬ ১০,১২, ১৩, ১৪, ১৫ নং আসামীরা মসজিদুল আকসা জামে মসজিদের সামনে অবস্থান করে। ৯, ১১, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২২, ২৩ নং আসামীসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আসামী বুচারী বিভাগ রোডে ওৎ পেতে থাকে। পরস্পর যোগসাজসে আসামীদের ভাড়া করা অজ্ঞাতনামা ৩ জন সন্ত্রাসী ১টি এ্যাপাচি (আরটিআর) লাল রংয়ের মোটরসাইকেলযোগে আমার পিতার নিকট এসে মোটরসাইকেল থামিয়ে এজাহারনামীয় আসামীসহ অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা আমার পিতাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার পিতা খান জাহাঙ্গীর আলীর পরিত্যক্ত টিনের ঘরের মধ্যে পড়ে থাকেন। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় পরিত্যক্ত টিনের ঘরে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
হত্যার কারণ হিসেবে এজাহারে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের পোস্টার টানানো ও ছিঁড়ে ফেলার কারণ উল্লেখ করা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. সুজিত অধিকারী খুলনা গেজেটকে বলেন, কেউ যদি ভালোবেসে আমার নামে পোষ্টার টাঙ্গায়। এর ফল যে এ রকম হবে, এটা খুবই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, আনছার আমাকে ফোন করে বলেছিল, ‘পাভেলের লোকজন পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে।’
যাদের নামে মামলা হয়েছে তাঁরও আপনার দলের লোকজন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘দল কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাউকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে বলেননি।’
প্রসঙ্গতঃ ২৪ মার্চ খানজাহান আলী থানার শিরোমনি লিন্ডা ক্লিনিকের সামনে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন দিঘলিয়ার বারাকপুর বাজার বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আনছারউদ্দিন। এ সময় তিনি লিন্ডা ক্লিনিকের পার্শবর্তী মসজিদুল আকসা জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন। পহেলা রমজানের দিন প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হওয়ায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
শেখ আনছার উদ্দিন ছিলেন বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগনেতা গাজী জাকির হোসেন হত্যা মামলার অন্যতম আসামী। যার নামে দিঘলিয়া থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
আনছার শেখ নিহত হওয়ার একদিন পর তার ছেলে তানভীর শেখ বারাকপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও দিঘলিয়া উপজেলা যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেলকে প্রধান আসামী করে ২৩ জনকে এজাহারভূক্ত এবং অজ্ঞাত ৭/৮ কে আসামী করে খানজাহান আলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।