আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান, অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও শবনম ফারিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ মামলার অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মিললে যেকোনো সময় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছে পুলিশ।
সাদ স্যাম রহমান নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক গত ৪ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলা করেন। মামলার অন্যতম আসামী দেশের জনপ্রিয় তারকা তাহসান খান এই মুহুর্তে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বেশ কয়েকটি কনসার্টে অংশ নিতেই সেখানে অবস্থান করছেন তিনি।
মামলার বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে তিনি জানান, মামলার বিষয়ে জেনেছেন তিনি। এ বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথাও বলছেন।
তাহসান বলেন, ‘প্রচারক কখনো প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক দায়ভার নেবেন না। সারাবিশ্বে লাখ লাখ প্রতিষ্ঠানের লাখ ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর রয়েছে। তারা তো ওইসব কম্পানির সমস্ত দায়ভার নিয়ে বসে নেই। কোম্পানির যখন সমস্যা দেখা যাবে তখন সরে আসবে। প্রচারণার দায়িত্ব পালন করা কোনোভাবেই অপরাধী হতে পারে না।’
জনপ্রিয় এই গায়ক মানহানি মামলা করবেন জানিয়ে বলেন, ‘গত ৭ মাস ধরে মানসিক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আর কিছু পত্রিকার চটকদার শিরোনাম দেখে অবাক হয়েছি। মামলা হয়েছে ৪ ডিসেম্বর। বৃহস্পতিবার রাতে এই তথ্য প্রকাশ হলো কেন? এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না জানি না।’
তাহসান বলেন, যে কোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার বা নজরদারিতে বলতে কী বোঝায়? হ্যাঁ যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় তাদের তো একটা নজরে রাখতেই হয়। তাই বলে যে কোনো চটকদার মুখরোচক শিরোনাম করে কাটতি বাড়ানোর কোনো অর্থ হয় না। যা হবে আইনগতভাবে হবে। একটা মামলা হয়েছে সেটার তদন্ত চলছে। তদন্ত করে যদি আমাদের দোষ না পাওয়া যায় তাহলে আমাদের তো কোনো সমস্যা হবে না। আর তদন্ত করে পেলে তখন যেটা আইনত হবে তাই হবে।
যা বললেন মিথিলা
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ইভ্যালির সঙ্গে ফেস অব ইভ্যালি লাইফস্টাইল হিসেবে ছিলেন। এ মামলায় অন্যতম আসামী সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান এবং অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া।
মামলার বিষয়ে মিথিলা গণমাধ্যমে বলেন, আমি এখনো লিগ্যাল নোটিশ পাইনি। সুতরাং, এই বিষয়ে কিছুই জানি না। মিথিলা বলেন, ইভ্যালির কারণে আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এর কারণে আমার এত বড় সুনাম নষ্ট হলো।
এর আগে মিথিলা জানিয়েছিলেন, গত ১৫ মে ইভ্যালিতে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যোগ দেওয়ার দিনই তাহসানের সঙ্গে ইভ্যালির একটি বিশেষ লাইভে অংশ নেন তিনি। এর দুই মাস পর মিথিলা ইভ্যালির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেন।
মিথিলা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আমি জয়েন করার দুই মাসের মধ্যে দেখি নানা জটিলতা। আগে তো এত কিছু টের পাইনি। তবে আমি চাই না এই সময়ে ইভ্যালি রিলেটেড কোনো খবরে আসতে। আমার আরও অনেক কাজ আছে, সেগুলো নিয়েই এখন ব্যস্ত আমি।
যা বললেন শবনম ফারিয়া
শবনম ফারিয়া প্রতিষ্ঠানটির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন। এ প্রসঙ্গে শবনম ফারিয়া গণমাধ্যমে বলেন, ‘যখন জানব আমার দোষ ছিল তখন আমি মামলা লড়ার প্রস্তুতি নেব।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী বলেন, আমি ইভ্যালিতে জয়েন করার পর কখনো এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে কোনো পোস্ট দেই নাই, প্রমোশনও করি নাই। কারণ ওদের সাথে আমার কথা ছিল, আমি পেছনে থেকে অফিশিয়াল কাজ করব; সামনে কোনো কাজ করব না।।
তার দাবি, যে সব কারণে তাকে অপরাধী দেখানো হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই তার।
শবনম ফারিয়া বলেন, আমি এখনো ইভ্যালি থেকে এক টাকাও পাইনি। যে অভিযোগ করেছে সেগুলোর সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। প্রমোশন করলে আমি সেটার জন্য অনেক টাকা নেই। তাদের কাছ থেকে বেতনের টাকা নিয়ে আমি প্রমোশন করব না বলে চাকরি নেওয়ার আগেই জানিয়েছি।
ইভ্যালি নিয়ে কখনো সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি উল্লেখ করে ফারিয়া বলেন, আমি ফেসবুকে কোনো রকম পোস্ট শেয়ার করিনি। কারণ, আমি জয়েন করার পরপরই ওদের ঝামেলা শুরু হয়ে যায়। আমি কোনো কাজই করতে পারিনি তাদের সঙ্গে।
এ অভিনেত্রীর ভাষায়, আমাকে হয়রানি করার জন্যই এ মামলা করা হয়েছে। কেন হয়রানি, কী জন্য হয়রানি সেটা তো আমি জানি না। আর থানা পুলিশ বলেছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে আমার সম্পৃক্ততা আছে কি না। আমি নিশ্চিত (শিউর) উনারা আমার সম্পৃক্ততা পাবে না ।
সাদ স্যাম রহমান তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রতারণামূলকভাবে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ ও সহায়তা করা হয়েছে। আত্মসাৎকৃত টাকার পরিমাণ ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা, যা তিনি এখনো উদ্ধার করতে পারেননি।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- গ্রেফতার হওয়া ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল, তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, আকাশ, আরিফ, তাহের ও মো. আবু তাইশ কায়েস।
খুলনা গেজেট/এএ