বিশ্ব মুসলিমদের মত বাংলাদেশে এখন অতিবাহিত হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। আরবী মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাস রমজান মাস। এই মাসে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তার অসীম ভান্ডার থেকে বান্দার গুনাহ মাফ করেন। এই মাসকে বলা হয় রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস।এই মাসে বান্দা পবিত্র রোজা পালন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সহ তারাবী নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন শরিফ তেলওয়াত, জাকাত আদায়, ইফতার ও সাহরির সময় দোয়ার মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহর সন্নিকটে পৌঁছাতে পারে। ধর্ম প্রাণ মানুষ এই মাসে নিরবে নিভৃতে দান করে। তাই এই মাসটি মুসলমানদের নিকট অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দের।
কিন্তু বর্তমান বছরের কিছু কিছু ঘটনা পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্বকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। যা একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাকে ভাবিয়ে তোলে। রমজান মাসের শুরুতে যেখানে অন্যান্য মুসলিম দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়া হয় সেখানে আমাদের দেশে রোজা উপলক্ষে বেশি মুনাফার আশায় সকল রকম পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রোজার দুদিন আগে যে বেগুন ৩০ টাকা এবং যে শশা ৪০ টাকা ছিল, রোজার শুরুতে বেগুন ৮০টাকা ও শশা ৯০টাকা হয়ে গেল। সাথে সাথে বৃদ্ধি পেল অন্য পণ্যের দাম। তেল চিনি চালের কথা বাদই দিলাম। সরকার বাজার মনিটরিং এ নামলো কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছু হলো না। ভোক্তা অধিকার মনিটরিং করছে, জরিমানা করছে কিন্তু কাজ কি হচ্ছে? এটার উত্তর কে দিবে।
সরকারকে ধন্যবাদ জানাই টিসিবির মাধ্যমে রেশন কার্ডে প্রায় এক কোটি লোককে নায্য মূল্যে তেল ডাল চিনি দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্ত সরেজমিনে যেয়ে দেখা গেছে, টিসিবির পণ্য নেওয়ার জন্য যারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তারা শুধু নিম্নবিত্ত নন, মধ্যবিত্ত আছেন। যারা কখনো কল্পনা করেননি, এভাবে মালামাল সংগ্রহ করতে হবে। আসলে গত দু’বছর করোনাকালে কিছু লোক ধনী হয়েছে আর বেশির ভাগ মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। এরা না পারে চাইতে না পারে বলতে।
অন্যদিকে সামাজিক অপরাধ বেড়েই চলেছে। ধর্ষণ এখন নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৫ বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউ ধর্ষণ থেকে বাদ যাচ্ছে না। আর এখন ধর্ষণকারী হিসেবে বখাটেদের সাথে এক ধরনের শিক্ষক নামধারী কিছু চরিত্রহীন যুক্ত হয়েছে। তবে আশার কথা সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তরিৎ সিদ্ধান্তে যথাযথ শাস্তিও হচ্ছে।
আর একটা জিনিস আমাকে খুব ব্যাথিত করে, সেটা হলো বড়দের যথাযথ মর্যাদা না দেওয়া। আজ যদি বড়দের ছোটরা মর্যাদা দেয় তাহলে ছোটরা একদিন তাদের ছোটদের কাছ থেকে সালাম পাবে।
সবশেষে বলি আমরা এখন সব কিছু রাজনীতি দিয়ে বিচার করি। এটা ঠিক নয়। রাজনীতি যেমন থাকবে তেমন থাকবে পারিবারিক বন্ধন বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তা।
তখন খুব ভালো লাগে কোন অভাবী ছাত্র-ছাত্রী টাকার অভাবে মেডিকেল বা ইন্জিনিয়ারিং বা উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হতে পারছে না, তখন কোন ডিসি বা পুলিশ অফিসার বা বিত্তবানরা এগিয়ে এসেছেন। আলহামদুলিল্লাহ মনটা আনন্দে ভরে যায়। মানুষ তো মানুষের জন্য।
আবারও পবিত্র রমজান মাসের শিক্ষা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বলি মানুষকে ভালোবাসি, যতটুকু পারি অভাবীকে সহযোগীতা করি। কারণ মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমে সত্যিকারের আনন্দ পাওয়া যায়।