খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনার বড় বাজারের পাটের বস্তার গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস
  আজারবাইজানে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

মহাষষ্ঠীতে আজ শুরু শারদীয় দূর্গোৎসব : সন্ধ্যার পর মণ্ডপ বন্ধ, বাদসাধছে বৃষ্টি

গেজেট ডেস্ক

শরতের শুভ্র আকাশে আজ সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি, তাই ভিজে গেছে কাশফুল। তবুও উৎসবে নেচে উঠেছে বাঙালি হিন্দুদের মন। ঢাকে পড়েছে কাঠি, বেজে উঠেছে বাদ্য। কারণ হিমালয়ের কৈলাশ শিখরের স্বামীগৃহ ছেড়ে এরই মধ্যে যে সন্তানসহ মর্ত্যে নেমে এসেছেন দুর্গতিনাশিনী দেবী মা দুর্গা। গতকাল বুধবার হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, ঢাকের বাদ্য, সানাই-শঙ্খ-উলুধ্বনি আর ভক্তকুলের আহবানের মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে বুধবার মা দুর্গার অকাল বোধনও সম্পন্ন হয়েছে। এখন তাকে বরণ করে নেয়ার পালা। তাই আজ বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) সকালে ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শুরু হলো দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। আগামী ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ভক্তদের মধ্যে কাটানোর পর বিজয়া দশমীতে দেবী আবার ফিরে যাবেন স্বর্গধামে। আর এরমধ্য দিয়েই ওদিন শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজা। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে সবধরণের উৎসব ছাড়াই।

এরমধ্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে- গুড়িগুড়ি বৃষ্টি আরো দুই থেকে তিনদিন হতে পারে। ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসবে বাদসাধছে বৃষ্টি।

দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে গতকাল বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবীর নিদ্রা ভাঙানোর জন্য বন্দনা পূজা করা হয়। মন্ডপে, মন্দিরে গতকাল পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় এ বন্দনা পূজা । বোধন দুর্গাপূজার প্রধান একটি আচার। ‘বোধন’ শব্দের অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্তি। পূজা শুরুর আগে সন্ধ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। সাধারণত শুক্লা ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বোধন হলেও এবার তিথি অনুযায়ী পঞ্চমীতেই বোধন পড়েছে। শরৎকালের দুর্গাপূজায় এ বোধন করার বিধান রয়েছে।
ধর্মীয় পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পুজোকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লঙ্কা যাত্রার আগে শ্রীরামচন্দ্র দেবী পূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের আমাবস্যা তিথিতে, যা শারদীয় দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। দেবীর শরৎকালের পূজাকে এ জন্যই হিন্দুমতে অকাল বোধনও বলা হয়। সে অনুযায়ীই গতকাল দেবীর এই অকাল বোধন হয়েছে।

খুলনা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার কুন্ডু জানান, ‘বুধবার মাকে মর্ত্যে নেমে আসার আহবান জানিয়ে বন্দনা পূজা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে শুরু হয় ষষ্ঠী পূজা। এ পূজা ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হবে। করোনার কারণে এবার পূজা হচ্ছে সম্পূর্ণ উৎসববিহীন। আরতি প্রতিযোগিতা হবে না। মণ্ডপ এলাকায় দোকানপাট থাকবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাত্ত্বিক আচারের মাধ্যমে পূজার আয়োজন সীমাবদ্ধ রাখা হবে। পূজা করা হবে যেসব উপকরণ লাগবে শুধু সেগুলো দিয়েই। এমনকি বিজয়া দশমীতে শোভাযাত্রাও হবে না।

এদিকে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুরের মধ্যে দুর্গা পূজার মূল আচার-অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যা আরতির পর সব মণ্ডপ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে আয়োজকদের। আগে জানানো হয়েছিল, সন্ধ্যা আরতির পর রাত ৯টা পর্যন্ত মণ্ডপে দর্শনার্থী প্রবেশের সুযোগ থাকবে। এখন সে সময় আরও কমিয়ে আনা হলো। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর করোনা ভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ঘর থেকে বের হলেই যেন সবাই মাস্ক পরে। আমরা সে সতর্কবার্তা অনুসরণ করছি।

এবার জনসমাগম এড়াতে হবে না পূজার অষ্টমী তিথিতে কুমারীপূজাও। এ ছাড়া যেহেতু উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করা হচ্ছে তাই এবারের দুর্গোৎসবকে দুর্গাপূজা হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। পরিস্থিতির কারণে কমে গেছে মণ্ডপের সংখ্যাও। এবার খুলনা মহানগর ও জেলায় ৯৫৯টি মণ্ডপে দূর্গাপূজা হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। এবার কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ২১৩টিতে।

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, গতকাল সন্ধ্যা থেকে ষষ্ঠী তিথির সূচনা ঘটেছে। আজ রাতে শুরু হবে মহাসপ্তমী তিথি। কাল শুক্রবার মহাসপ্তমীর সকালে ঢাক-ঢোল-কাঁসর বাজিয়ে কলাবউ স্নান ও আদরিণী উমার সপরিবারে তিথি বিহীত পূজা। শনিবার মহাঅষ্টমী কল্পরম্ভ ও বিহীত পূজা। পরদিন হবে মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহীত পূজা। সোমবার সকাল ৯টায় পূজা সমার্পণ ও পরে দর্পণ বিসর্জন-শান্তিজল গ্রহণ।

সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকা মতে, এ বছর মা দুর্গার আগমন হচ্ছে দোলায়। যার এর অর্থ মড়ক। ফলে পূজা বা তার পরবর্তী সময়েও মহামারী পরিস্থিতি বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মা মর্ত্য থেকে স্বর্গধামে ফিরবেন গজে বা হাতিতে। যার ফল শুভ হয়। এদিকে দুর্গাপূজাকে ঘিরে সারাদেশে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!