খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ পৌষ, ১৪৩১ | ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরে কারখানায় আগুন : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২
  হাইকোর্টের বেশ কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম তদন্তে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৬৫

মহানবী (স.)’র প্রতি কটুক্তি ও অবমাননা কেন?

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী

সর্বযুগের, সর্বকালের, সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন দলের দু’জন শীর্ষ নেতার কটুক্তি ও অবমাননার কারণে সম্প্রতি ভারতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সারাবিশ্বে উঠেছে নিন্দার ঝড়। চরম সমালোচনার মুখে পড়েছে বিজেপি। কিছুদিন আগেও ভারতের কর্ণাটকে হিজাব নিয়ে হয়ে গেল তুলকালাম কান্ড। হিজাবের প্রতি বিষোদ্বগারের নগ্ন রূপ আমরা দেখলাম হিন্দুত্ববাদী একদল উগ্রপন্থী যুবকের। কিন্তু কেন? শান্তির ধর্ম এবং একমাত্র অবিকৃত ধর্ম ইসলামের প্রতি কেন এই আক্রমণ?

কোন মুসলমানই অন্য ধর্মের নবীর প্রতি কখনই কটাক্ষ ও অবমাননা করে না। বিগত কোন যুগেই এর দৃষ্টান্ত নেই। ইহুদীদের নবী মূসা, হারুন, সুলাইমান, দাউদ; খ্রীষ্টানদের নবী ঈসা (আঃ) সবার নাম শুনলেই মুসলমানরা বলে, আলাইহিমুস-সালাম, অর্থাৎ তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটা আমাদের মহানবীর (স.) শিক্ষা। হুজুর (স.) নিষেধ করেছেন যে, বিধর্মীরা তোমাদের রবের গালি দিলেও তোমরা তাদের মাবুদগুলোকে গালি দিবে না। অন্য ধর্মের নবী মানে তিনি মুসলমানদেরও নবী। অথচ গত দেড় হাজার বছরের ইতিহাস কি বলছে? সেই মুহাম্মদ (স.)-এর যুগ থেকে অদ্যবধি বিধর্মীদের একটি মহল কি পরিমাণ ষড়যন্ত্র ও বিষোদগারে লিপ্ত আছে। তাহলে প্রশ্ন হলো তারা কেন আমাদের পূতপবিত্র নবীকে নিয়ে কটাক্ষ করবে, অপবাদ দিবে ও কুৎসা রটাবে?

আমাদের নবীর (স.) প্রতি খ্রীষ্টান ও ইহুদীদের ষড়যন্ত্র আজকের নতুন নয়। নবী করীম (স.)-এর জমানা থেকেই এই ষড়যন্ত্র চলে আসছে যা কুরআনের অসংখ্য জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (স.) মদীনায় আগমন করার পর বিভিন্ন ইহুদী গোত্রের সঙ্গে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেছিলেন যে, তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে না এবং একে অপরকে সাহায্য করবে। কিন্তু তারা সবসময়ই বিশ্বাসঘাতকতা করতো এবং মক্কার কাফের ও অন্যান্য মুনাফিকদের সাথে যোগসাজসে মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করত এবং মহানবী (স.) কে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় করার ফন্দি আটতো।

মুশরিক, ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা সবসময়ই মুসলমানের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে এবং নানাভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, কুৎসা রটনা করছে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব দয়ার নবী (স.) কে অবমাননা করছে এবং তার সম্পর্কে ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি ও প্রপাগান্ডা করে চলেছে। তারই সাস্প্রতিক কিছু নমুনা আমরা লক্ষ্য করেছি। বেশ কয়েক বছর আগে, ইহুদী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক স্যাম বাসিল মুহাম্মদ (স.) এবং তার পরিবারকে প্রকাশ্য অবমাননা করে কুরুচিপূর্ণ একটি মুভি তৈরি করেছিল। দোজাহানের সর্দার মুহাম্মদ (স.) এবং তার পূত-পবিত্র বিবিগণ বিশেষ করে খাদিজা (রা.), আয়েশা (রা.) এবং অন্যান্য সাহাবীদের সরাসরি নাম নিয়ে কুলাঙ্গার এই স্যাম বাসিল যে অর্ধনগ্ন ও চরম কূরুচিপূর্ণ চলচ্চিত্র তৈরি করেছে তা দেখলে দূর্বলতম মুসলমানেরও লোম খাড়া হয়ে উঠবে। জঘন্য চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রশমিত না হতেই আবার কিছুদিন পর ফ্রান্সের এক পত্রিকায় রসুল (স.) কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন ছাপা হয়েছিল। এর কিছুদিনপর এই একই পত্রিকা আবারও মহানবীর (স.) নামে অবমাননাকার ব্যাঙ্গ্যাত্মক চিত্রের প্রদর্শন করে। সর্বশেষ মহানবীর প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন দলের দু’জন শীর্ষ নেতার লাগামহীন কটুক্তি। এ যেন কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা! এ কারণে ফুঁসে উঠেছে মুসলিম বিশ্ব। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়ও এর প্রতিবাদ হচ্ছে।

এমতাবস্থায় আমাদের করণীয় হলো:

এক. এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করা। তা হতে পারে মুখের মাধ্যমে, লেখার মাধ্যমে অথবা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভার মাধ্যমে। সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখা যায়, অনেক নাস্তিক, বিধর্মী, এমনকি অনেক ধর্মযাজকও এই কর্মকান্ডের নিন্দা জানিয়েছে। আমরাও এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও ধিক্কার জানাই।

দুই. বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানকে আমরা ভারতের প্রতি নিন্দাজ্ঞাপন ও চাপ প্রয়োগ করার জন্য উদ্ধুদ্ধ করতে পারি, যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।

তিন. আরবের বিভিন্ন দেশে ভারতীয় পণ্যকে বর্জন করার যে ডাক দেয়া হয়েছে এটাও জনগণের অধিকার। মনে করলে যে কেউ কোন পণ্য বর্জন করতে পারেন।

চার. দূর্বলতম ঈমানের অংশ হিসেবে এই ঘটনাকে অন্তরে অন্তরে ঘৃণা করা। কারণ মহানবী (স.) বলেছেন, যদি তোমরা অন্যায় কাজ দেখো তাহলে শক্তি থাকলে হাতের দ্বারা বন্ধ করে দিবে, তাও না পারলে জবাব দ্বারা প্রতিবাদ করবে, তাও না পারলে মনে মনে ঘৃণা করবে; আর এটা ঈমানের সবচেয়ে দূর্বল স্তর (সহিহ মুসলিম ও তিরমিজী)।

ইসলামের উপর আক্রমণ সবযুগে ছিল, থাকবে। মনে রাখতে হবে, এই আক্রমণের কারণ অন্য কিছু নয়। পৃথিবীতে একমাত্র ধর্ম ইসলাম যার অনুশীলন করা হয়, বাস্তবে মেনে চলা হয়। পৃথিবীতে মুসলমানের সংখা বেড়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। এটাই বিরোধীতার আসল কারণ। কেননা অন্যান্য বিকৃত ধর্ম নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নেই। শুধু শুধু অহেতুক আক্রমণ ইসলামের উপর।

(লেখক : মৎস্যবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)

 

 

খুলনা গেজেট/ আ হ আ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!