খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ পৌষ, ১৪৩১ | ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে এক জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১৪
  দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হলেও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে : তারেক রহমান
  খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মুন্সি মাহাবুব আলম সোহাগকে কারাগারে প্রেরণ

মসজিদের বিশেষ আদব ও শিষ্টাচার

হাফিজ মাছুম আহমদ

প্রিয় পাঠক বৃন্দকে ! আজ আমি হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী,আপনাদের সামনে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তা এমন একটি বিষয়, যা আমাদের সবারই প্রয়োজন এমন একটি বিষয়, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন পৃথিবীর মধ্যে সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদ। আর সর্ব নিকৃষ্ট স্থান বাজার। মসজিদ হলো আল্লাহর ঘর। মুসল্লিরা মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ বিভিন্ন ইবাদতে মগ্ন থাকেন। মসজিদকে মুমিনরা অত্যন্ত ভালোবাসেন, মসজিদের সঙ্গে মুমিনের যেন আত্মার সম্পর্ক। ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, সাহাবায়ে কেরামগণ মসজিদে প্রবেশ করলে অনেক সময় অবস্থান করতেন আর বাজারে গেলে খুব জলদি জলদি ফিরে আসতেন।

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে থাকে সে আরশের ছায়ায় স্থান পাবে।’ এই মসজিদে প্রবেশের জন্য যেমন তাকিদ দেওয়া হয়েছে, ঠিক তেমনি মসজিদের আদব রক্ষা করার জন্যও হাদিসে তাকিদ এসেছে। পৃথিবীর কোনো রাজা বাদশাহর দরবারে যেতে হলে যদি পূর্ণ আদব রক্ষা করতে হয় তাহলে যিনি সমস্ত পৃথিবীর বাদশাহ তার দরবারের আদব রক্ষা করা তো আরো বেশি জরুরি।

মসজিদের আদব ও শিষ্টাচার

১. মসজিদে প্রবেশের সময় প্রথমে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ে নেওয়া। ২. তারপর রাসুল (সা.) এর প্রতি দরুদ শরিফ পড়ে নেওয়া। ৩. অতঃপর মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়া—আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিক, ৪. মসজিদে ডান পা আগে রাখা ও ৫. মসজিদে প্রবেশ করে ইতিকাফের নিয়ত করা।—(ইবনে মাজাহ ও শামী) (৬) অজুসহ পাকপবিত্র অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা সুন্নত। নাপাক অবস্থায় অথবা পেঁয়াজ-রসুনের মতো দুর্গন্ধযুক্ত কোনো খাবার খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করা উচিত নয়। বিড়ি-সিগারেট, গুল-জর্দা, তামাক ও মাদকজাতদ্রব্য খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করা মাকরুহ। (৭) মসজিদে ধীর-স্থিরতার সঙ্গে গমন করা উচিত। রাকাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় তাড়াহুড়া করে দৌড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়।

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজে অবশ্যই ধীর-স্থিরতার সঙ্গে আসবে। যতটুকু পাবে, আদায় করবে। আর যতটুকু ছুটে যাবে, পূর্ণ করবে।’ (বুখারি, হাদিস :৬০৯) (৮) মসজিদে প্রবেশকারী দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় ছাড়া বসবে না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুই রাকাত নামাজ আদায় না করে বসবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১১১০)। (৯) মসজিদে দুনিয়াবী কথাবার্তা না বলা। সর্বাবস্থায় মনে রাখতে হবে, মসজিদ গল্পের জায়গা নয়, নিছক ইবাদতের জায়গা।

বর্তমানে মানুষ মসজিদের আদব পালনের ক্ষেত্রে অনেক অমনোযোগী, অধিকাংশ মানুষ মসজিদে প্রায়ই শোরগোল করে, এতে মসজিদের সম্মান ও মর্যাদার বরখেলাপ হয়। নবি করিম (সা.) বলেন, বাজারের হট্টগোল থেকে বেঁচে থাক এবং মসজিদকে দুনিয়াবী কথাবার্তা দ্বারা বাজারের সাদৃশ্য করো না। (১০) মুখে অথবা অন্য কোনোভাবে শরীরে দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ না করা। এতে করে অন্যান্য মুসল্লিদের কষ্ট হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) কাঁচা পেঁয়াজ বা কাঁচা রসুন খেয়ে অথবা দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন।

কেননা বনী আদম যে বিষয়ে কষ্ট অনুভব করে ফেরেশতাগণ তা থেকে কষ্ট অনুভব করেন। হাদিসে বলা হয়েছে, মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী কাঁচা পেঁয়াজ ও কাঁচা রসুন খেয়ে তোমরা মসজিদে প্রবেশ করা থেকে সাবধান থেকো, যদি খেতেই হয় তবে আগুনের সাহায্যে এগুলোর দুর্গন্ধ ধ্বংস করে নিবে। (ত্ববরানী)। (১১) যখন ইমাম খুতবা শুরু করবেন তখন মসজিদে উপস্থিত ব্যক্তির খুতবা শুনা ওয়াজিব। হোক সে ইমামের নিকটবর্তী বসে কিংবা দূরে, এমন কাজ যার দ্বারা খুতবা শুনার মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় সে কাজ করা গুনাহের শামিল। যেমন—খাওয়া, পান করা, কথাবার্তা বলা, চলাফেরা করা, তাসবীহ পড়া, সালাম দেওয়া, সালামের উত্তর দেওয়া বা শরীয়তের কোনো মাসায়েল বলা এ সমস্ত কাজ যেমন নামাজরত অবস্থায় নিষেধ, তেমনি খুতবার সময়ও নিষেধ। (১২) মসজিদে মোবাইল ফোনের ব্যবহার এখন অসহনীয় ও অমার্জনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বিশেষ করে নামাজের সময় মোবাইলের রিংটোনের কারণে ইবাদতের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। অনেক সময় তা চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। তাই মসজিদে প্রবেশের আগে মোবাইল ফোন বন্ধ করা উচিত। ভুলবশত যদি মোবাইল খোলা থাকে আর নামাজরত অবস্থায় রিংটোন বেজে উঠে, তাহলে এক হাত ব্যবহার করে বা নিজ নামাজ ছেড়ে দিয়ে হলেও অপর মুসল্লিদের কথা ভেবে হলেও মোবাইল বন্ধ করে দিতে হবে। (১৩) নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করা একদমই উচিত নয়। এই সম্পর্কে মহানবি (সা.) এর একটি হাদিস আছে যার সারমর্ম এই—তিনি সাহাবিদের উদ্দেশে বলেন, যদি তোমরা নামাজ আদায়কারির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার গোনাহ সম্পর্কে জানতে তাহলে ৭০ হাজার বছর অপেক্ষা করতে তার পরও নামাজের সামনে দিয়ে যাতায়াত করতে না।

মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় (১৪) প্রথমে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়া, (১৫). তারপর রাসুল (সা.) এর প্রতি দরুদ শরিফ পড়া, (১৬) অতঃপর এ দোয়া পড়া—আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিনফাদলিক, (১৭) মসজিদের বাইরে বাম পা আগে রাখা ও (১৮) অতঃপর প্রথমে ডান পায়ে জুতা পরা। তারপর বাম পায়ে পরা। (ইবনে মাজাহ ও তিরমিজি)।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন আমাদেরকে উপরোক্ত আলোচনা গুলোর প্রতি গুরুত্ব সহকারে নিয়ম কানুন বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করেন আমিন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!