খুলনা, বাংলাদেশ | ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ২১ জুন ঢাকায় জনসভার অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে আবেদন জামায়াতের

মসজিদ পুড়িয়ে আরো মুসল্লি হত্যার ইচ্ছা ছিল ক্রাইস্টচার্চ হামলাকারীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ দুটি মসজিদে ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির ভয়াবহ বন্দুক হামলায় নিহত হন ৫১ জন। মসজিদে নামাজ পড়ার সময় মুসল্লিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালানো ব্রেন্টনের সাজা ঘোষণার শুনানি শুরু হয়েছে আজ সোমবার।

এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, ক্রাইস্টচার্চ হাইকোর্টে ব্রেন্টনের সাজা ঘোষণার চার দিনের শুনানির প্রথম দিন সোমবার ওই হামলার বিষয়ে নতুন বিবরণ তুলে ধরা হয়।

এ সময় আদালতের এক প্রসিকিউটর জানান, মুসল্লিদের হত্যার পর মসজিদগুলো পুড়িয়ে ফেলার ইচ্ছা ছিল বন্দুকধারীর। কারণ, ব্রেন্টন আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে হত্যা করতে চেয়েছিল।

সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, ব্রেন্টন স্বীকার করেছে, দুটি নয়, তিনটি মসজিদে সে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। তার ইচ্ছে ছিল, গুলি করে মানুষ মেরে মসজিদগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার। সে কাজ করতে পারেনি বলে পুলিশের সামনে রীতিমতো আফসোস করেছে ব্রেন্টন ট্যারান্ট। পুলিশকে ব্রেন্টন জানিয়েছে এবং আদালতের কাছেও স্বীকার করেছে, নুর ও লিনউডের পর অ্যাশবার্টন মসজিদে হামলার পরিকল্পনা ছিল তার।

শুনানির সময় এই প্রথমবারের মতো ক্রাইস্টচার্চের হামলায় নিহতদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার এবং বেঁচে যাওয়াদের বন্দুকধারীর মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিহত ৩৩ বছর বয়সী আতা এলায়ান নামের এক ব্যক্তির মা হামলাকারীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তুমি নিজের মানবতাকে হত্যা করেছ এবং আমি মনে করি না যে পৃথিবী তোমাকে ভয়াবহ এ অপরাধের জন্য ক্ষমা করবে।’

এর আগে ৫১টি হত্যা, ৪০টি হত্যাচেষ্টা এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয় ২৯ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান ব্রেন্টন হ্যারিসন ট্যারান্ট। এটি ছিল নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম সন্ত্রাসবাদের ঘটনা।

ব্রেন্টন নিউজিল্যান্ডের প্রথম ব্যক্তি হতে পারে, যাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার সম্ভাবনা ছাড়াই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হতে পারে।

২০১৯ সালের হামলার দিন জুমার নামাজের সময় মুসল্লিদের ওপর বন্দুক হামলার ঘটনা সরাসরি অনলাইনে সম্প্রচার করেছিল বন্দুকধারী ট্যারান্ট। মর্মান্তিক ওই হামলায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল পুরো বিশ্ব।

নভেল করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতির কারণে আজ সোমবার আদালতের শুনানির সময় মূল কক্ষ প্রায় জনশূন্য ছিল। তবে ভার্চুয়ালি এতে সংযুক্ত ছিলেন হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া অনেক ব্যক্তি ও নিহতের স্বজনরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই শুনানির এ চার দিনে আদালতে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন।

২০১৯ সালের ১৫ মার্চ শুক্রবার আর পাঁচটা জুমার নামাজের দিনের মতোই দিন শুরু হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে। কিন্তু দিনের শেষে মানুষের স্মৃতিতে ঢুকে গিয়েছিল রক্তের ভয়াবহতা আর মৃতদেহ ছড়িয়ে থাকার ছবি। প্রায় দেড় বছর পর নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্টের সাজা ঘোষণার শুনানি আজ শুরু হয়েছে। কঠিন নিরাপত্তার মধ্যে শুনানি চলছে নিউজিল্যান্ডের আদালতে। আগামী চার দিন বিচারপতি প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান শুনবেন বলে জানা গিয়েছে। তারপর ঘোষণা হতে পারে রায়।

ওই হামলার বিষয়ে জানা গেছে, হঠাৎ করে এ কাজ করেনি ব্রেন্টন। এক মাস ধরে হামলার পরিকল্পনা করেছিল সে। প্রতিটি মসজিদের ফ্লোর প্ল্যান জোগাড় করে নিখুঁত নকশা তৈরি করেছিল সে। কীভাবে গোটা ঘটনা অনলাইনে দেখানো যাবে, তারও ছক কষেছিল ব্রেন্টন। বাস্তবে তা-ই ঘটেছে। অবাক হয়ে গোটা বিশ্ব দেখেছে, কীভাবে জুমার নামাজ পড়তে আসা সাধারণ মানুষ গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছেন, লুটিয়ে পড়ছেন মাটিতে। ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রথম মসজিদ থেকে দ্বিতীয় মসজিদে পৌঁছে আবারও গুলি চালাচ্ছে সন্ত্রাসবাদী ব্রেন্টন। মেরে ফেলছে কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয়দের। কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের দিকে বন্দুক তাক করেও শেষ পর্যন্ত গুলি চালাচ্ছে না ব্রেন্টন। দ্বিতীয় মসজিদের বাইরেই পুলিশ ধরে ফেলে ব্রেন্টনকে। সে কারণেই তৃতীয় মসজিদে পৌঁছতে পারেনি সে।

ওই ঘটনার পর গ্রেপ্তার হওয়ার পরও নিরুত্তাপ ছিল ব্রেন্টন। প্রথমবার শুনানির সময় আদালত চত্বরে তাকে হাসতে দেখা গিয়েছিল, যা দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিল নিহতদের পরিবার। আজ সোমবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আদালতে নিয়ে আসা হয় ব্রেন্টনকে। জেলের ধূসর পোশাকে তাকে কোর্ট রুমে বসে থাকতে দেখা গেছে। যে কক্ষে শুনানি হচ্ছে, সেখানে করোনার জন্য খুব বেশি মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে আদালতের অন্যান্য কক্ষে নিহতদের আত্মীয়-পরিজনের বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তাঁদের শুনানি দেখানো হচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিহতদের পরিবারকে শুনানিতে অংশ নিতে গেছেন। বিদেশ থেকে গেলে নিউজিল্যান্ডে এখন ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক। নিহতদের পরিবারের বহু সদস্য ১৪ দিন হাতে নিয়েই সেখানে পৌঁছেছেন। এঁদের অনেকেই আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। সাধারণত সর্বাধিক ১৭ বছর পর্যন্ত কারাবাসের সাজা হয় নিউজিল্যান্ডে। ব্রেন্টনের ক্ষেত্রে এটাই হবে বলে সবাই মনে করছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই প্রথম গতানুগতিকের চেয়েও কড়া সাজা শোনাতে পারেন নিউজিল্যান্ডের আদালত। এই প্রথম সারা জীবনের জন্য কাউকে হাজতবাসের সাজা শোনানো হতে পারে। মধ্যবর্তী সময়ে প্যারোলেও মুক্তি পাবে না ব্রেন্টন।

কেবল নিউজিল্যান্ড নয়, ব্রেন্টনের কী সাজা হয়, তার দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন আরো একবার ক্রাইস্টচার্চ হামলায় সব নিহতের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন।

 

খুলনা গেজেট / এমএম

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!