খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ পৌষ, ১৪৩১ | ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগামী বিজয় দিবসের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করা হবে : আসিফ নজরুল
  সচিবালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত : প্রেস উইং
  কুড়িগ্রামে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ, যুবদল নেতা নিহত

মণিরামপুরে এডিপি’র কাজে অনিয়মের অভিযোগ

এসএম সিদ্দিক, মণিরামপুর

যশোরের মণিরামপুরে এডিপি’র বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও উপজেলা উন্নয়ন তহবিলের কাজে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা পরিষদের খাত ভিত্তিক বরাদ্দের ৫০ লাখ টাকাসহ বরাদ্দকৃত প্রায় ৪ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণের নামে অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। গৃহীত প্রকল্পের মেয়াদ গত ৩১ আগস্টের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও সিংহভাগ গৃহীত (পিআইসি) প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি।

সূত্র জানায়, অর্থ বছরে ২০১৯-২০ বস্তুগত অবকাঠামো যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে ২ কোটি ৪২ লাখ ২ হাজার ৯শ’ টাকার কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। সকল কাজের শেষ সময় ছিল গত ৩১ আগস্ট। বাকী অর্থের কাজ পিআইসি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও আরএফকিউ রিকোয়েষ্ট ফর কোটেশন স্কীমের মাধ্যমে করা হয়েছে। পিআইসির মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণে রয়েছে শুভকংরের ফাঁকি। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া সামগ্রি ক্রয় ও বিতরণে ১০টি তালিকায় প্রায় ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

এরই অংশ হিসেবে মাত্র ৫শ’ ৫০টি ফুটবল কিনে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের মাঝে বিতরণের জন্য দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ফুটবল মাত্র ৪শ’৫০ টাকা দরে কেনা হলেও দাম নির্ধারন করা হয়েছে ১ হাজার টাকা। এ ফুটবল কেনা হয় যশোর শহরের মেসার্স খেলা-ধূলা নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে। দোকান মালিক মামুন হোসেন জানান, ইউএনও স্যার ও ইঞ্জিনিয়ার স্যার এসে ফুটবলগুলি কিনেছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, সব ক্রীড়া সামগ্রি কেনা ও বিতরণ করা হয়েছে। সাড়ে ৪শ’ টাকায় ফুটবল কিনে ১ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারনের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো সব কেনাকাটা হয়নি, বাকি টাকা দিয়ে ফের কেনা হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, অবশিষ্ট অর্থ বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে ব্যয়ের জন্য রাখা হয়েছে।

অথচ উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকায় এ প্রকল্পের অর্থ এ ধরনের ব্যয়ের কোন সুযোগ নেই বলে জানা গেছে। দুঃস্থদের মাঝে ছাগল বিতরণের নামে ২ লাখ টাকা পিআইসি স্কীমের ৮ নম্বর তালিকায় সেলাই মেশিন বিতরণ ও প্রশিক্ষণের নামে ৪ লাখ পিআইসি স্কীমের ৫ ও ৩৮ নম্বর তালিকায়, ভুট্টা মাড়াই ও ঝাড়ার জন্য নেট ক্রয় ও বিতরণ বাবদ ২ লাখ পিআইসি স্কীমের ২০ নম্বর তালিকায় প্রকল্প নেয়া হলেও এখনো তা বিতরণের কথা ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কেউ জানেন না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, অচিরেই নেট কিনে বিতরণ করা হবে বলে তিনি শুনেছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুজার সিদ্দিক জানান, বিষয়টি প্রকল্প সভাপতি ভাল বলতে পারবেন।

কিন্তু উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকার ১২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন উপজেলা বাস্তবায়ন অগ্রগতি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রেরণে ব্যর্থ হলে সে উপজেলার অর্থ ছাড় করা হবে না।

এদিকে উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকার ৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদে উপজেলা সমূহ ২য় অনুচ্ছেদের ১ উপ-অনুচ্ছেদ বর্ণিত খাতভিত্তিক বিভাজন অনুযায়ী ‘আর্থ সামাজিক অবকাঠামো’-এর শিক্ষার উন্নয়নে বরাদ্দের ১০ শতাংশ দেয়ার কথা থাকলেও তা প্রায় ১৮ শতাংশ করা হয়েছে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চালুয়াহাটি ইউনিয়নের শয়লাহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংস্কারে এডিপি ১ লাখ ও বিশেষ বরাদ্দ বাবদ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে দুই বার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য উপকরণ বিতরণে ২ লাখ পিআইসি স্কীমের ২৭ নম্বর তালিকা ও প্লাস্টিক আসবাবপত্র সরবরাহে ২ লাখ টাকার প্রকল্প পিআইসি স্কীমের ৬ নম্বর তালিকায় নেয়া হলেও তা বিতরণের হদিস মেলেনি।

উপজেলার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য উঠে এসেছে। উপজেলার দেলুয়াবাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন রায় বলেন, তিনি প্রতিষ্ঠানের জেনারেল তহবিল থেকে ৬৫ হাজার টাকায় প্লাস্টিকের উচু নীচু বেঞ্চ কিনেছেন। পরে বরাদ্দকৃত অর্থ দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

অপরদিকে, দরপত্রের মাধ্যমে রাস্তা সোলিং করণেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকার ১৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রকল্পস্থলে সর্বসাধারণের অবগতির জন্য প্রকল্পের নাম, ব্যয়সহ প্রকল্প শুরু ও শেষ হওয়ার তারিখ সম্বলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করার কথা থাকলেও সিংহভাগ প্রকল্পস্থলে তা করা হয়নি।

সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে রোহিতা ইউনিয়নের আমজদের বাড়ির মোড় হতে বাগডোব পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ নাম প্রকল্পে রাস্তা সোলিংকরণসহ ৫টি পুকুরে প্লাসাইডিং-এর কাজের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। শুধুমাত্র একটি পুুকুরের সামান্য অংশ ও ২শ’ফুট রাস্তা সোলিং করা হয়েছে। ৯০ হাজার টাকা ব্যয় ধরে খেদাপাড়া ইউনিয়নের মান্নানের বাড়ির মোড় হতে লাভলুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সোলিংকরণের কথা থাকলেও সেখানে ওই রাস্তায় কাজের নমুনা চোখে না পড়ায় সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পটি পরে পরিবর্তন করে পাল পাড়ায় নেয়া হয়েছে।

একই চিত্র পাওয়া যায় ওই ইউনিয়নের নুুরোর দোকানের মোড় হতে মোসলেমের বাড়ির অভিমূখ পর্যন্ত রাস্তা সোলিংকরণের কাজে। জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, কাজ ঠিকমত না হলে বিল ছাড়পত্র দেয়া হবে না।

 

খুলনা গেজেট / এআর




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!