চুঁইঝাল বর্তমান দেশের দক্ষিণ ও দক্ষি পশ্চিমাঞ্চলের একটি সম্ভবনাময় কৃষিপন্য। দিন দিন এ মসলা জাতীয় লতা ফসলটির চাহিদা ও ব্যবহার বেড়েই চলছে। সাথে সাথে সৃস্টি হচ্ছে চুঁইঝালের ব্যাপক বাজার চাহিদা। ঔষধিগুন থাকায় চুই ঝালটি সমলাটি দেশে বিদেশেও ব্যাপক ভাবে দিন দিন জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
বাণিজ্যিক গুরুত্ব ও বাজার ব্যবস্থাপনা
নার্সারি শিল্পে চুঁইঝাল একটি মূল্যবান উপকরণ উপাদান হিসেবে বিশেষ বিবেচনা করা যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এরই মধ্যে চুঁই লতার চারা উৎপাদন বাণিজ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় চুঁই প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মে।
বর্তমানে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে বৃহত্তর খুলনা বরিশাল ফরিদপুর অঞ্চলে চুইয়ের আবাদ এবং বাজার রমরমা ত্যাজি। শুকনো এবং কাঁচা উভয় অবস্থায় চুই বিক্রি হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি কাঁচা চুইঝাল লতা অঞ্চল ভেদে ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে শাখা ডাল থেকে শিকড়ে ডালে ঝাল বেশি হয় বলে এর দামও একটু বেশি। শুকনো চুইয়ের দাম কাঁচার চেয়ে আরও ২-৩ গুণ বেশি। ১৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। একজন সাধারণ কৃষক মাত্র ২-৪টি চুই গাছের চাষ করে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটাতে পারেন। বেশি ফলনের মাধ্যমে নিজের চাহিদাও মিটিয়ে বাড়তি আয় করতে পারেন।
বাংলাদেশে মরিচের বদলে চুইঝালের চাষের বিস্তার ঘটিয়ে হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। অবাক করা বিষয় হলো এই যে খুলনার চুই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে ও রফতানি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবাই যদি এর দিকে পরিকল্পিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেন এবং সুনজর দেন তবে আমাদের দেশ চুইঝাল থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। চুইয়ের জনপ্রিয়তা আর গ্রহণ যোগ্যতার কারণে দেশ-বিদেশে চুইঝাল বা চুই হোটেল নামে অগণিত হোটেল রেস্তোরাঁর নামকরণ করা হয়েছে। এসব হোটেলে চুইসমৃদ্ধ খাবার পরিবেশন করা হয়। সবাই খেয়ে রসনা তৃপ্তি মেটান। আমাদের দেশেও বেশক‘টি চুইঝাল হোটেল এর মধ্যে চুই নামের কারণে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে এবং দারুণ ব্যবসা করে যাচ্ছে।
চুঁই গাছের ভেষজগুণ অসামান্য এবং বিস্তৃত। পেটেরপীড়া সারানো, ক্ষুদামন্দা, রুচি বাড়ানো, পেটের গ্যাস নিবারণ, শ্বাসকষ্ট, কফ, কাশি, ডায়রিয়া কমানো, ঘুমবাড়ানো, শারীরিক দুর্বলতা কমাতে, গায়ের ব্যথা, ম্যাজম্যাজ ভাব কমাতে, বাচ্চাপ্রসবের পর শরীরের ব্যথা কমানোর জন্য অব্যার্থ মহৌষধ হিসেবে চুইঝাল কাজ করে। একটি পরিবারের বছরের চুইয়ের চাহিদা মেটাতে বড় একটি আরোহী আমগাছের ফলনই যথেষ্ট। প্রতিদিনই চুইঝাল লতা কাটা যায়।
নার্সারি শিল্পে চুইঝাল একটি মূল্যবান লাভজনক উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। একজন সাধারণ কৃষক নিজের ২-৪টি গাছে চইয়ের চাষ করে নিজের পারিবারিক চাহিদা মেটাতে পারেন অধিকন্তু অতিরিক্ত ফলন বিক্রি করে পারিবারিক অন্যান্য আবশ্যকীয় চাহিদা মিটাতে পারেন অনায়াসে। মরিচের বিকল্প হিসেবে চুইকে যুক্ত করতে পারলে দেশের হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। একই সাথে ভেষজগুণ থাকার কারণে অনেক রোগব্যাধির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
এজন্য দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা, গবেষণা, মাঠ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন, বিপণন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বহুমুখী ব্যবহারে প্রচার প্রচারণা। তবেই চুই নিয়ে আমরাও অল্প সময়ে অনেক দূর পথ পেরিয়ে যেতে পারব।
লেখক : জেলা বাজার কর্মকর্তা, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, খুলনা।
খুলনা গেজেট /এমএম