বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকার গণতান্ত্রিক পরিসরকে সংকোচিত করে হত্যা, গুম, খুন ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে বিরোধীদলকে নির্মূল করতে চায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। ৪ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত জানাতে আজ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। মহাসচিব বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন।
ফখরুল বলেন, সভায় ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়-ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, পর পর এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের বিষয় নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর উদাসীনতা, অযোগ্যতা, দুর্নীতি ও নজরদারির অভাবের কারণে ভয়াবহ পরিণতির স্বীকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এই অনির্বাচিত সরকারের ব্যর্থতার কারণে সামগ্রিকভাবে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি বিভাগগুলোর কর্মকর্তাদের তোষণনীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচনের কারণে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধির কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সভায় বঙ্গবাজারসহ অন্যান্য স্থানে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং অবিলম্বে বঙ্গবাজারসহ সকল বাজারে অগ্নি নির্বাপণ ও সকল নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের দাবি জানায়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি জার্মান মিডিয়া হাউজ ডয়েচে ভেলে কর্তৃক সোশ্যাল মিডিয়ায় র্যাবের অপকর্মের ডকুমেন্টারি প্রকাশিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, এই ডকুমেন্টারি প্রমাণ করেছে যে, অনির্বাচিত সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। সভা অবিলম্বে সংবিধানবিরোধী, মানবাধিকারবিরোধী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জোর দাবি জানায়। সভা, র্যাব কর্তৃক বেআইনিভাবে গুম, হত্যা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায় এবং এই সব সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী সরকারের পদত্যাগ দাবি করে।
মহাসচিব বলেন, সভায় বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধীদল ঘোষিত কর্মসূচি পালনের সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় বিনা অজুহাতে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ কর্তৃক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এ ধরনের হামলা ও গ্রেপ্তার থেকে প্রমাণ হয় যে, গণতান্ত্রিক পরিসরকে সংকোচিত করে হত্যা, গুম, খুন ইত্যাদি সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন করে বিরোধীদলকে নির্মূল করতে চায় সরকার। সভা অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
তিনি বলেন, সভায় সম্প্রতি নওগাঁয় র্যাব কর্তৃক সরকারি প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মকর্তা সুলতানা জেসমিনকে বেআইনিভাবে তুলে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। অবিলম্বে দায়ী র্যাব কর্মকর্তা, সরকারের যুগ্ম সচিব আজিজুল হকের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়। সভায় এ বিষয়ে জনমত গড়ে তোলার জন্য যথাযথ কর্মসূচি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তিনি আরও বলেন, সভায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রয়োগ করে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, সাংবাদিক এবং নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, দৈনিক সংগ্রামের পত্রিকার সম্পাদক মো. আবুল আসাদসহ অন্যান্য সাংবাদিক এবং নাগরিকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অবিলম্বে ডিজিটাল সিকিউটিরি আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
খুলনা গেজেট/ এসজেড