সরিষার আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ ভাগ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের তেল বীজ উৎপাদনের অধীনে জমির পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর। অথচ তেল বীজ চাষের উপযোগী জমির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর। সম্ভাব্য গড় উৎপাদন প্রতি হেক্টরে ১.৫ থেকে ২ টন। তবে চাহিদার তুলনায় ভোজ্যতেলের মোট দেশজ উৎপাদন অনেক কম হওয়ায় প্রতি বছর ‘ শতকরা ৮০ ভাগ’ ঘাটতি থাকছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ঘাটতি মোকাবিলায় বিদেশ হতে ভোজ্যতেল আমদানি করতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে। দেশে ভোজ্যতেলের মূল উৎস হলো সরিষা এবং সামান্য পরিমাণে সূর্যমুখী, সয়াবিন ও তিল এবং রাইস ব্রান যা থেকে সর্বমোট ৫ লক্ষ টনের কাছাকাছি ভোজ্যতেল পাওয়া যায়। এ হিসেবে দেখা যাচ্ছে দেশের প্রয়োজনীয় ভোজ্যতেলের ঘাটতি থাকে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ।’
বর্তমানে দেশে আবাদি জমির মাত্র ৪ শতাংশ তেল বীজ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বাস্তবতাকে বিবেচনায় এনে আমাদের এখনই প্রয়োজন তেল ফসলের চাষাবাদ বৃদ্ধি করে তেল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেয়া।
মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ইরির এশিয়া প্রতিনিধি নাফিস মিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা জানান।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব কমলারঞ্জন দাশ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, ইরির বাংলাদেশ প্রতিনিধি হোমনাথ ভাণ্ডারি উপস্থিত ছিলেন।
আদ্দুর রাজ্জাক জানান, লবণ, খরাসহ বিভিন্ন ঘাতসহনশীল (স্ট্রেস টলারেন্ট) ধানের জাত উদ্ভাবন ও গবেষণায় বাংলাদেশকে আরও বেশি করে সহযোগিতা করবে ইরি। এছাড়া ভারতের বারানসিতে অবস্থিত ইরি দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিসে স্থাপিত বিশ্বমানের গবেষণাগারে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা দ্রুত ধানের জাত উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করতে লবণ, খরাসহ বিভিন্ন ঘাতসহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতোমধ্যে দেশের বিজ্ঞানীরা উন্নতমানের অনেকগুলো জাত উদ্ভাবন করেছে। তারপরও আরও জাত দরকার। এ বিষয়ে আমরা ইরির সহযোগিতা চাই।’
ইরির প্রতিনিধিদল এসময় বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইস রিলিজের বিষয়ে জানতে চান ও রিলিজের অনুরোধ জানান।
দেশে গোল্ডেন রাইস রিলিজের বিষয়টি বর্তমানে পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন আছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ১দেশে গোল্ডেন রাইস রিলিজের বিষয়ে পরিবেশবাদী ও সুশীল সমাজের আপত্তি রয়েছে।’
২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক ধান সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানান ইরির এশিয়া প্রতিনিধি নাফিস মিয়া। এ বছর উজানের ঢলে হাওরে ৪ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে আগাম বন্যায় প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে ‘সময়মতো হাওরের ধান কাটা হয়েছে’ উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে দেশে খাদ্য সংকট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই মুহূর্তে মাঠে ধানের অবস্থা ভাল। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৯০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। তবে সময়মতো বাঁধ রক্ষা, অনুকূল আবহাওয়া ও যন্ত্রের মাধ্যমে দ্রুততার সাথে ধান কাটার ফলে ইতোমধ্যে হাওরের ধান ঘরে তোলা গেছে।