খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  ঝিনাইদহে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা, জাসদ গণবাহিনীর দায় স্বীকার

ভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রথমবার ওয়ানডেতে মুখোমুখি ভারত-বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ও ভারত। আয়োজক দেশ পাকিস্তানে খেলার ব্যাপারে সম্মত না হওয়ায় ভারতের ম্যাচগুলো হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটি হবে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় শুরু হবে এই ম্যাচ।

বাংলাদেশ-ভারত মুখোমুখি হচ্ছে এক পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, ৫ই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, এরপর থেকে দুই দেশেরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন পর্যায় থেকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ভারত পাশাপাশি দুই দেশ এবং প্রতিবেশী দেশগুলো যেকোনো খেলায় মুখোমুখি হলে একটা রাজনৈতিক আবহ তৈরি হতে দেখা যায়। তার ওপর পাঁচই অগাস্টের পর দুই দেশের মধ্যে ওয়ানডে সংস্করনে প্রথম সাক্ষাৎ এটি।

এর আগে, গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ভারতে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টতে একদমই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ক্রিকেট সাংবাদিক সাব্বির হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘দর্শকরা আগ্রাসী কিছু মুহূর্ত উপভোগ করতে তাকিয়ে থাকবে।’

“ক্রিকেটারদের মনের রাজনৈতিক ভাবনা কী সেটা তো আসলে বলা যায় না। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ থাকলে দর্শকরা মাঠে তাকিয়ে থাকে আলাদা কিছু আগ্রাসনের মুহূর্ত থাকবে,” বলেন তিনি।

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ থাকলে বাংলাদেশের সমর্থকদের মধ্যে বাড়তি প্রত্যাশা উঁকি দিতে দেখা যায়। যদিও ক্রিকেটীয় বাস্তবতায় বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পরিসংখ্যান ও শক্তিমত্তার দিক থেকে।

কিন্তু প্রতিপক্ষ ভারত বলেই কি না একটা ‘দেখিয়ে দেয়ার প্রবণতা’ দেখা যায়।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়মিত দর্শক জাকির হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “দুই দেশের ম্যাচ থাকলে আমরা আলাদা আগ্রহ নিয়ে টিভির সামনে বসি। ভারত অনেক ইস্যুতে আমাদের সাথে বড় ভাইয়ের মতো আচরণ করে বলেই আমরা চাই ক্রিকেটাররা যাতে দেখিয়ে দেয়, আমরাও কম না।”

ভারতের সমর্থকরাও বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ থাকলে মুখিয়ে থাকে। গত কয়েক বছরে বড় আসরে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের ভিউয়ারশিপ অনেক সময় পাকিস্তান-ভারত ম্যাচকেও ছাপিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে সম্প্রচার সংস্থাগুলো।

বাংলাদেশ ও ভারত এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আছে গ্রুপ ‘এ’ তে, এই গ্রুপের বাকি দুইদল পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড।

ভিরাট-রোহিতের ভারত
সাকিব আল হাসান থেকে শুরু করে জসপ্রিত বুমরাহ, এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অনেক তারকা ক্রিকেটারই অনুপস্থিত।

ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও ক্রিকেটের বড় নাম ভিরাট কোহলির দিকে থাকবে বাড়তি নজর।

রোহিত ও ভিরাট দুজনই আইসিসি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় রান করে থাকেন।

এমনকি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুই দলের শেষ দেখাতেও রোহিত করেছিলেন ১২৩, ভিরাট অপরাজিত ৯৬।

তাই বাংলাদেশের বোলারদের বড় চ্যালেঞ্জ থাকবে এই দুজনকে আউট করা।

‘বাংলাদেশ এক্সপ্রেস’ নাহিদ রানা
নাহিদ রানার ‘বাংলাদেশ এক্সপ্রেস’ নামটা ইয়ান বিশপের দেয়া, সাধারণত গতিশীল বোলারদের নাম হয় নিজ শহরের নামে যেমন শোয়েব আখতার ছিলেন ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’, একসময় মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকে বলা হতো ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।

তবে বাংলাদেশে যেহেতু নাহির রানার মতো গতিশীল কেউ কখনও আসেনি, তাই তার নামের পাশে ক্যারিবিয়ান ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ বসিয়ে দিয়েন ‘বাংলাদেশ এক্সপ্রেস’।

এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রেকর্ডেড কোনো বাংলাদেশি বোলারের হাত থেকে বের হওয়া সর্বোচ্চ গতির বল করেছেন নাহিদ রানা, ১৫২.০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়।

খেলা বদলে দিতে পারেন ভারুন চক্রবর্তী ও রিশাদ হোসেন
২০১৮ সাল থেকে ভারতের জাতীয় দলের রাডারে থাকলেও ভারুন চক্রবর্তী মাত্রই ওয়ানডে দলে সুযোগ পেয়েছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাম্প্রতিক সিরিজে, তবে তার মান নিয়ে প্রশ্ন নেই একেবারেই। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে তিনি আইপিএল শিরোপা জিতিয়ে অবদান রেখেছেন।

ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও পারফর্ম করেছেন।

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এক প্রকার ‘ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি’ ভারুন।

আর ভারতের ম্যাচগুলো যেহেতু সংযুক্ত আরব আমিরাতে হতে যাচ্ছে, এই উইকেটগুলোতে স্পিন ধরে, একটু ধীরে আসে বল। ভারুন উইকেটের সহায়তাও পাবেন ভালোই।

ভারুনের লেগব্রেক গুগলির ফাঁদে পড়তে পারেন ব্যাটাররা।

এদিক থেকে বাংলাদেশের জবাব রিশাদ হোসেন , রিশাদকে বাংলাদেশের ‘এক্স ফ্যাক্টর’ বলছেন তার সতীর্থরা।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল আইসিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত রিশাদের ওপর আস্থার কথা জানিয়েছেন।

তবে রিশাদ শুধু বল হাতে না, ব্যাট হাতেও ভূমিকা রাখতে পারেন।

রিশাদের ব্যাটিং-টা বাংলাদেশ দলের জন্য এক বোনাস, যদি ব্যাটে বলে হয় তবে খুব দ্রুত বাউন্ডারি মেরে স্কোরকার্ড এগিয়ে নেয়ার সামর্থ্য রাখেন রিশাদ।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল লোয়ার অর্ডারে এই ধরনের দক্ষতার ব্যাটারের খোঁজে ছিল বহুদিন। রিশাদের সাথে সুযোগ পেলে তানজিম সাকিবও ভালো ব্যাট চালাতে পারেন।

ভারতের বিপক্ষে ২০২২ সালে এক ম্যাচে তানজিম সাকিব ১ চার, ১ ছয়ে ৮ বলে ১৪ রান তুলেছিলেন, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এই ধরনের ক্যামিও ইনিংসের কদর আছে।

বাংলাদেশকে ‘ডার্ক হর্স’ বলছেন মুরালি কার্তিক
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ওয়ানডে পারফরম্যান্স করুণ, এমনকি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সারির ক্রিকেটারদের নিয়ে করা পাকিস্তান শাহীনসের বিপক্ষেও বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে হেরেছে প্রস্তুতি ম্যাচে।

মাত্র ৩৮.২ ওভারে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।

তাই সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিয়ে খুব আশাবাদী হওয়াটা কঠিন।

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার মুরালি কার্তিক ক্রিকেট পোর্টাল ক্রিকবাজকে দেয়া এক প্রেডিকশনে বাংলাদেশকে ‘ডার্ক হর্স’ বলে আখ্যা দিয়েছেন, এই ধরনের দল যে কোনও সময় চমকে দিতে পারে।

বাংলাদেশকে সেমিফাইনালের কাতারে রাখতে চাইছেন মুরালি কার্তিক তবে ক্রিকবাজের বাকি বিশ্লেষকরা কার্তিকের সাথে দ্বিমত পোষণ করছেন।

ভিরেনদর সেহওয়াগ, দিনেশ কার্তিকরা বলছেন ‘ডার্ক হর্স’ আফগানিস্তান।

২০২৩ বিশ্বকাপেও আফগানিস্তান নজর কাড়া ক্রিকেট খেলেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর চারটি ওয়ানডে সিরিজের মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে, শেষ ছয় সিরিজেও সেটিই বাংলাদেশের একমাত্র জয়।

অথচ এক সময় বলা হতো ওয়ানডে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সেরা ফরম্যাট। এখন সেই ফরম্যাটেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ‘সবচেয়ে খারাপ দল’ হিসেবে একটা সিরিজ খেলতে যাচ্ছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!