ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙার মূল পরিকল্পনাকারী আনিসুর রহমান আনিসকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা যুবলীগের দফতর সম্পাদক মনোয়ার হোসেন বলেন, শনিবার বিকালে কুমারখালী উপজেলা যুবলীগের এক জরুরি সভায় রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমান আনিসকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে ওই যুবলীগ নেতাসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রায়ডাঙা গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে আনিসুর রহমান আনিস (৩৫), তার ক্যাডার কয়া গ্রামের শাহাবউদ্দিনের ছেলে হৃদয় আহমেদ (২০) ও একই উপজেলার ছেঁউড়িয়া মণ্ডলপাড়া এলাকার নাজিম উদ্দিনের ছেলে সবুজ হোসেন (২০)।
ওই যুবলীগ নেতার সঙ্গে কয়া মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ ও কলেজের অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার তিন আসামিকে শনিবার বেলা ৩টার দিকে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে উপস্থাপন করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমারখালী থানার ওসি (তদন্ত) রাকিবুল হাসান বলেন, শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় আসামিদের আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনও আদালতে শুনানি হয়নি।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে অবস্থিত কয়া মহাবিদ্যালয়ে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাংচুর করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত।
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের রেশ কাটতে না কাটতেই বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ অবস্থায় অপরাধীদের ধরতে মাঠে নামে পুলিশ।
তারা শুক্রবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমান আনিসকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্যমতে ঘটনায় জড়িত অপর দুইজন হৃদয় আহমেদ ও সবুজ হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বাচ্চু নামে আরও একজন জড়িত আছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) জেলা পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত বলেন, কলেজের কমিটি নিয়ে বর্তমান সভাপতির সঙ্গে স্থানীয় একটি গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছিলো। এরই জেরে বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত ১টার সময় কয়া ইউনিয়নের যুবলীগ সভাপতি আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে চারজন বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। বাঘা যতীনের ভাস্কর্যের নাক ও ডান গালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। নৈশপ্রহরী খলিলুর রহমান এটি দেখে ফেলেন এবং পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে এ কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, এর পেছনে অন্য কারও মদদ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুরো ঘটনা জানা সম্ভব হবে।এ ঘটনায় জড়িত বাচ্চু নামে একজন এখনও পলাতক। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার কুষ্টিয়া শহরে মানববন্ধন করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন