‘কিংবদন্তি’, ‘বরেণ্য’, ‘নন্দিত’, ‘শতবর্ষের সেরা’– এমন অসংখ্য বিশেষণ যে কণ্ঠশিল্পীর নামের পাশে শোভা পায়– সেই সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিন আজ। প্রতিবছর এই দিনটি কাটে অগণিত ভক্ত-শ্রোতা, অনুরাগী আর কাছের মানুষদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে। এবার তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে নিজ থেকে আজকের দিনটি আলাদা করে উদযাপনের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান সাবিনা ইয়াসমিন।
তিনি বলেন, ‘কোনো উপলক্ষ্যকে ঘিরে যে আয়োজনই করা হোক না কেন, সেখানে প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পাওয়া যাবে না, যদি না পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে। এই সময়টা তেমনি– যেখানে দাঁড়িয়ে ঘটা করে জন্মদিন পালন করা চোখে পড়ার মতো বিষয়। যখন দেশের মানুষ দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন আর যা-ই হোক জন্মদিন উদযাপনের কথা ভাবতেও পারিনা; বরং আজকের এই দিনেও সবাইকে আহ্বান জানাতে চাই, বানভাসি মানুষদের পাশে থাকার। বলতে চাই, আসুন, আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাই। নতুন করে দেশটা গড়ে তুলি। এরপর সবকিছু যখন স্বাভাবিক হয়ে উঠবে, তখন না হয় জন্মদিন উপলক্ষ্যে কিছু একটা করা যেতে পারে।’
জন্মদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘ছোটবেলায় ঈদের নতুন জামাকাপড় যেভাবে লুকিয়ে রাখতাম, একইভাবে জন্মদিনের আগেও সেটাই করতাম। তখনকার আনন্দটা ছিল অন্যরকম। পরিবারের মধ্যকার সেই আনন্দ ভীষণ মিস করি। এখনও জন্মদিন এলে আব্বা, আম্মা ও বোনদের কথা খুব মনে পড়ে। তাদের শূন্যতা অনুভব করি। ভক্তদের ভালোবাসার সেই শূন্যতা কিছুটা হলেও ভুলে থাকতে সাহায্য করে।’
এদিকে অসুস্থতার কারণে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘ তিন মাস চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। ফিরেছেন মে মাসের শেষ সপ্তাহে। এখন চিকিৎসকের নিয়ম মেনে চলছেন এবং ঔষধ গ্রহণ ছাড়াই বেশ ভালো আছেন বলেও জানিয়েছেন এই শিল্পী।
পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে গানের ভুবনে সাবিনা ইয়াসমিনের পদচারণা। ১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ সিনেমায় সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের সুরে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন সাবিনা ইয়াসমিন। তবে প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৬৭ সালে আলতাফ মাহমুদের সুরে গাওয়া ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমার ‘মধু জোছনা দীপালি’ গানের মধ্য দিয়ে। সেই শুরু এরপর আর থেমে থাকার অবকাশ পাননি। গেয়ে চলেছেন একের পর এক গান। তাঁর গাওয়া অজস্র গান যুগ যুগ হৃদয়ে আন্দোলিত করে যাচ্ছে সংগীতপ্রেমীদের। শ্রুতিমধুর কণ্ঠ অনবদ্য গায়কী দিয়ে একদিকে তিনি যেমন জয় করেছেন অগণিত শ্রোতার ভালোবাসা, তেমনি পেয়েছেন সর্বোচ্চ ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার’সহ অগণিত পুরস্কার ও সম্মাননা।
খুলনা গেজেট/এনএম