খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

ভারী বর্ষণ : তেলিগাতীর বিস্তৃণ এলাকা প্লাবিত

একরামুল হোসেন লিপু

টানা দুইদিনের ভারী বর্ষণের ফলে খানজাহান আলীর থানার তেলিগাতী কুয়েট রোডে অবস্থিত খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক ইনস্টিটিউট (এইচএসটিটিআই), গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খুলনা মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ তেলিগাতী, উত্তর বনিকপাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি সড়ক, বসতবাড়ি, মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট এবং বসতবাড়ির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এদিকে গতরাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। আজ রোববার সকালে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সারজমিনে এলাকা ঘুরে দেয়া যায়, খুলনা সরকারি টিসার্চ ট্রেনিং কলেজ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক ইনস্টিটিউটে প্রবেশের রাস্তা এবং খেলার মাঠ পানিতে থৈ থৈ করছে। একই অবস্থা খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অবস্থা। গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের খেলার মাঠে হাঁটু সমান পানি জমে আছে। প্রতিভাময়ী প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সামনের সড়কে হাঁটু সমান পানি। তেলিগাতী সড়কের উপর কয়েকজনকে জাল ফেলে মাছ ধরতে দেখা যায়। রাস্তার উপর হাঁটু সমান পানি জমে থাকায় বয়স্ক নারী-পুরুষ, মহিলা, শিশুসহ সাধারণ পথচারীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে আছে বসতবাড়িতে পানি জমে যাওয়া পরিবারগুলো।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, এলাকার পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু কোন ব্যবস্থা না থাকায় , পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায়, ড্রেনের ভেতর ময়লা আবর্জনা জমে থাকার কারণে প্রতি মৌসুমী বৃষ্টির পানি সরতে না পারার কারণে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গত পাঁচ বছর ধরে এই দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। একটু ভারী বৃষ্টি হলেই এলাকার রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, পুকুর, মাছের ঘের, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব পানিতে তলিয়ে যায়। এলাকাবাসীর এই দুর্ভোগ নিরসনে কোন মন্ত্রী-এমপি, সিটি কর্পোরেশন কিংবা কোন জনপ্রতিনিধি এ পর্যন্ত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

এলাকাবাসী আরো জানান, এ বছর আমাদের তেলিগাতীর এ অংশে পানি জমে থাকার মেইন কারণ হচ্ছে গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের সামনে সড়কের উপর কালভার্টের একাংশ নির্মাণ করা হয়েছে ৬ মাস পূর্বে। বাকি অর্ধেকাংশ নির্মিত না হওয়ায় কালভার্ট দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ রয়েছে। কালভার্ট দিয়ে পানি সরতে না পারার কারণে গত ২ দিনের ভারী বর্ষণে আমাদের এ এলাকায় অতিরিক্ত পানি জমে আছে। বৃষ্টি থামার পরেও বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে এই পানি সরতে। ততদিন আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের সামনের সড়কের বিপরীতে দোকানের সামনে পানিতে তলিয়ে যাওয়া দোকানদার মোঃ মহসিন খুলনস গেজেটকে বলেন, দোকানের সামনে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে ড্রেনের পানি ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। রাস্তায় হাঁটু পানি উঠে যায়। লোকজন বাড়ি থেকে বেরুতে পারে না। ড্রেনের ভিতর অনেক ময়লা জমে আছে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এলাকার পানি সরানোর কোনো সু-ব্যবস্থা হয়নি।

তেলিগাতী গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের এলাকার অনেক দুর্ভোগ। পানি সরতে পারতেছে না। এ কারণে পানি জমে আছে। প্রতিবছর বৃষ্টি হলেই এরকম হয়। গতকালকে বৃষ্টি হয়েছে আজকে এরকম হচ্ছে। থাকবে আরো কয়েকদিন। তারপর হয়তো আস্তে আস্তে পানি সরবে। এলাকার অনেক ঘর বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। তাদের দুর্ভোগ হচ্ছে বেশি।

একই গ্রামের নুরুল ফকির বলেন, প্রতিবছর বর্ষা আসলেই আমাদের এলাকার ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট, পুকুর, মাছের ঘের সব তলায় যায়। রাস্তার উপর হাঁটু পানি দিয়ে চলতে আমাদের কষ্ট হয়। রাতের বেলা অন্ধকারে রাস্তার উপর হাঁটু পানি ঠেলে মানুষ কিভাবে যাবে আসবে? এলাকার পানি সরানোর ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে আছে। পানি সরানোর ব্যবস্থা না করলে আমাদের কষ্ট যাবে না।

খুলনা সরকারি টিসার্চ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের ফোকাল পয়েন্ট বিধান চন্দ্র রায় বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে প্রতিষ্ঠানের নিচ তলায় পানি জমে যায়। পানি জমে থাকে প্রতিষ্ঠানে ঢোকার রাস্তায়। হাঁটু পানি জমা হয় প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠে। সাধারণত প্রতিষ্ঠানের নিচ তলায় বিএড অনার্স কোর্সের ক্লাসগুলো নেওয়া হয়। ক্লাসের ভিতর পানি ঢুকে যাওয়ায় নিচের রুমগুলোতে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হবে না।

গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে একটু ভারী বৃষ্টি হলেই আমাদের বিদ্যালয়ের ভিতর পানি জমে। ভারী বৃষ্টির কারণে অনেক সময় ক্লাস রুমেও পানি ঢুকে যায়। বাচ্চাদের খেলার মাঠে হাঁটু সমান পানি জমে । পানি জমে থাকায় মশার উপদ্রব বাড়ে। দুর্গন্ধময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়।এলাকার পানি নিষ্কাশনের কোন সু-ব্যবস্থা নেই। ছাত্র-ছাত্রীসহ আমরা শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!