উত্তর ভারতের বেশ কিছু অংশে প্রবল বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। মূলত টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে এই অঞ্চলটি কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত তিন দিনে সেখানে ২৮ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
বহু শহর ও এলাকার অনেক রাস্তা ও ভবন হাঁটু পানিতে ডুবে আছে। সোমবার (১০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মির, রাজস্থান, দিল্লি এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর।
প্রবল এই বৃষ্টি এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নানা ঘটনার বিশৃঙ্খলার ভীতিকর বেশ কিছু চিত্র হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং দিল্লির লোকেরা অনলাইনে শেয়ার করেছেন। এসব ছবিতে যানবাহনকে কাগজের নৌকার মতো ভেসে যেতে, কর্দমাক্ত পানিকে আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করতে, নদীর পানি তীর ছাপিয়ে বাড়ি-ঘর ও বহু অবকাঠামোকে নিমজ্জিত করতে দেখা যাচ্ছে।
এনডিটিভি বলছে, হিমাচল প্রদেশে ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। অবিরাম বৃষ্টির কারণে রাজ্যটির ঘরবাড়ি ও বহু অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং স্বাভাবিক জীবনও স্তব্ধ হয়ে গেছে। রাজ্যটির মানালি, কুল্লু, কিন্নর এবং চাম্বা এলাকায় আকস্মিক বন্যায় কিছু দোকান ও যানবাহন ভেসে গেছে।
প্রতিবেশী রাজ্য উত্তরাখণ্ডেও ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার খবর পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে রাজ্যটিতে নদী ও স্রোতের জলস্তর বিপদসীমা অতিক্রম করার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে গুরগাঁও এবং দিল্লির সমস্ত স্কুল সোমবার বন্ধ রয়েছে। মূলত ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ট্রাফিক জ্যাম এড়াতে গুরগাঁও প্রশাসন কর্পোরেট হাউসগুলোকে সোমবার বাড়ি থেকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে।
এনডিটিভি বলছে, হরিয়ানা রাজ্য হস্তনিকুন্ড ব্যারেজ থেকে যমুনা নদীতে এক লাখ কিউসেক পানি ছাড়ার পরে দিল্লি সরকার বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য ১৬টি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে। এছাড়া দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল শহরে বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা এবং যমুনার ক্রমবর্ধমান পানির স্তর নিয়ে আলোচনা করার জন্য উচ্চ-পর্যায়ের একটি বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন।
অন্যদিকে ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মিরের কাঠুয়া ও সাম্বা জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। যদিও ভারী বর্ষণের জেরে তিন দিন স্থগিত থাকার পর রোববার পাঞ্জতার্নি এবং শেশনাগ বেস ক্যাম্প থেকে অমরনাথ যাত্রা আবারও শুরু হয়।
এছাড়া রাজস্থান, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার বেশ কয়েকটি অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নিচু এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা এবং বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ি এলাকায় প্রবল বৃষ্টির কারণে পানির তোড়ে বেশ কয়েকটি সেতু ভেঙে পড়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে সেতুসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে পড়ার ভিডিও শেয়ার করেছেন। আর সেসব ভিডিওতেই বন্যার পানির তীব্রতা উঠে আসছে।
রাজ্য কর্তৃপক্ষ দুই দিনের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে চন্ডিগড়-মানালি জাতীয় সড়কসহ ৭৬৫টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
খুলনা গেজেট/এনএম