দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের হিন্দু অধ্যুষিত ও বিশিষ্ট মন্দিরের জন্য বিখ্যাত তিরুপতি শহরে কোভিডে মৃত রোগিদের অন্তিম সৎকারের কাজে হাত লাগিয়েছেন মুসলিমগণ। অরাজনৈতিক, ইসলাম প্রচারমূলক তবলিগ জামাতের সদস্যরা ভারতের চরম করোনা মহামারির সঙ্কুল পরিস্থিতিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মৃতদেহ সৎকার করছেন।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় গুরুত্ব পাওয়া খবরে প্রকাশ, যখন আত্মীয়-পরিজন ভাইরাসের ভয়ে লাশ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে কিংবা শত শত মৃতদেহ সামাল দেওয়ার মতো উপযুক্ত জনবল পাওয়া যাচ্ছে না, তখন ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে মুসলিম তবলিগ জামাত ‘সৌহাদ্যপূর্ণ মানবিকতার’ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। করোনায় জর্জরিত ভারতে এমন উদাহরণ দেশটির উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতা ও পরমতসহিষ্ণুতার আদর্শকে উচ্চকিত করেছে।
অথচ গত বছর (২০২০) করোনা পরিস্থিতির শুরুতে তবলিগ জামাত ইসলাম প্রচারের নিয়মিত সংঘবদ্ধ কাজের জন্য সরকারি-বেসরকারি বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল। এমনকি, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ‘অপরাধী’ তকমা সেঁটে দেওয়া হয়েছিল তবলিগের গায়ে। দেশদ্রোহ এবং খুনের মামলা পর্যন্ত দায়ের হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে।
সেই বিতর্ক পিছনে ফেলে কোভিডে মৃতদের সৎকারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সুন্নি ইসলামি সংগঠন তবলিগ জামাত। এক চিতায় ১০ জনের দেহ তোলার পরিবর্তে ধর্মীয় আচার মেনে যাতে প্রত্যেক কোভিড রোগির সৎকার করা যায়, সেই কাজে ধর্মীয় রীতি ও মৃতদেহের সম্মান বজায় রেখে হাত লাগালেন মুুুুসলিমগণ।
প্রকাশ, গত এপ্রিল মাসে সেখানে দৈনিক প্রায় ১৫টি করে শব দাহ করেছেন তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা। আর মহামারির একেবারে সূচনা পর্ব থেকে সবমিলিয়ে ৫৬৩টি শব দাহ করেছে তবলিগ জামাত। শুধু এই কাজের জন্যই তিরুপতি ইউনাইটেড মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে কোভিড-১৯ জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি (জেএসি) গঠন করেছে তারা।
তবলিগ জামাতের সক্রিয় সদস্য জেএমডি গাউস বলেন, ‘গত বছর মহামারির দায় আমাদের উপর চাপানো হয়েছিল। আর এখন আমাদের প্রশংসা শুনছি।’ তিনি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তিরুপতিতে তাঁদের ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক তিনটি আলাদা আলাদা দল গড়ে কাজ করছেন। এপ্রিল মাসে এই প্রত্যেকটি দলই কমপক্ষে ১৫টি করে শব দাহ করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জেএমডি গাউস আরও জানিয়েছেন যে, আগে বয়স্কদের শবই বেশি আসত। এখন অল্পবয়সিদের দেহও দাহ করতে হচ্ছে। পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। হিন্দু, মুসলিম কিংবা খ্রিস্টান— ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী রীতিনীতি মেনেই দেহ সৎকার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তবলিগ জামাত কর্তৃপক্ষ।
বাইরের কোনও সাহায্য নিয়ে তারা নিজেরাই নিজেদেরই পিপিই কিটের ব্যবস্থা করছেন মুসলিমগণ। তবে মুসলিম না হয়েও বেশ কিছু যুবক তাদের সঙ্গে এই কাজে হাত লাগিয়েছে মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে।
খুলনা গেজেট/কেএম