পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারত। তারপরও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না দেশের ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে ৩টি কারণ চিহ্নিত করা গেছে।
কৃষি বিভাগ, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে এ বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। যার কারণে বর্তমানে পাইকারী পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ ৫৫/৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেয়াজের আকারে বড়, দেখতে চকচকে, ঝাজও বেশি। যে কারণে দাম কম থাকলে মানুষের প্রথম পছন্দ দেশি পেঁয়াজ।
অন্যদিকে ভারতে পেয়াজের সর্বোচ্চ রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫০ মার্কিন ডলার। এর সঙ্গে ৪০ শতাংশ শুল্ক যোগ করায় পেঁয়াজের দাম পড়েছে কেজিতে ৯০ টাকা। ব্যাংকে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এ সংক্রান্ত খরচও বেড়েছে। এই দামে পেঁয়াজ আমদানি করা হলে দেশের বাজারে তা বিক্রি করা যাবে না। এ অবস্থায় পেঁয়াজের সর্বোনিম্ন মূল্য ও শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন কতো :
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ টন। তার আগের বছর দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ৩৪ লাখ টন। গত ২০১৯-২০ অর্থবছর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৬ লাখ টন। অর্থাৎ, গত দুই অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকের আগ্রহের কারণেই দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টনের বেশি। যেভাবে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, তাতে এবারও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই সময়ে কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য সরকার আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের অন্যতম উৎপাদনকারী এলাকা মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সেখানকার কৃষকেরা। বাড়তি ফলনের কারণে তাঁরা এ বছর পেঁয়াজের দাম পাচ্ছেন না। পেঁয়াজের দাম এতটাই কমেছে যে কৃষকেরা প্রতি কেজি মাত্র দু-তিন টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন অবস্থায় অনেক কৃষক মাঠেই ফসল নষ্ট করছেন।
ব্যবসায়ীরা যা বলছেন,
ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হলে দেশি পেঁয়াজের ব্যবহার বাড়ে উল্লেখ করে নগরীর বড় বাজারের ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম পাটোয়ারি বলেন, পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ায় বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। বিভিন্ন জেলা থেকে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ এসেছে। এখন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তিনি।
তিনি বলেন, ভারত পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানি মূল্য ৫৫০ মার্কিন ডলার ও ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর সঙ্গে বড় সমস্যা ব্যাংকে এলসি খুলতে ডলার পাওয়া যায় না। অনেক বেশি দামে ডলার করতে হয়। ডলার ক্রয়, পরিবহন খরচ, বন্দরের খরচ, বাংলাদেশে ১০ শতাংশ শুল্কায়ন করে কেজিতে দাম আরও বেশি পড়বে। এসব কারণে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে অনীহা দেখা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ভারত গত বছরের ৭ ডিসেম্বর পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। মার্চে অনির্দিষ্টকালের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে। চলতি মাসের ৫ তারিখে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
খুলনা গেজেট/এএজে