নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সুমন মিয়াকে (৪০) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার বিকেলে পাড়াতলী ইউনিয়নের মীরেরকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সুমন মিয়া চরসুবুদ্ধি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় লোকজনের সূত্রে জানা গেছে, ২৯ মে তৃতীয় ধাপে রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। গতকাল বুধবার দুপুরে পাড়াতলী ইউনিয়নের মামদিরকান্দি এলাকায় গণসংযোগে যান চশমা প্রতীকের প্রার্থী আবিদ হাসান রুবেল ও তালা প্রতীকের প্রার্থী সুমন মিয়া। দুপুর দেড়টার দিকে মামদিরকান্দি এলাকায় দুজনের সমর্থক মুখোমুখি হয়। প্রথমে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে সুমন মিয়ার প্রচারণার গাড়ি থেকে আবিদ হাসান রুবেল ও তাঁর সমর্থকদের ওপর গুলি ছোড়া হয়। এ সময় রুবেলের সমর্থকরা সুমন মিয়ার সমর্থকদের ঘেরাও করে ফেলে। সুমন দৌড়ে পালিয়ে পাশের মীরেরকান্দি এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। রুবেলের সমর্থকরা পিছু নিয়ে সুমন মিয়াকে আটকে মারধর করে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘সুমন মিয়াকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাঁর নাক ও মুখে রক্ত ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে গুলির কোনো আলামত নেই।
সন্ধ্যায় হাসপাতালের সামনে নিহত সুমনের ভাই মো. আজহারুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘আমরা মিটিং করতে গেছি। সেখানে যাওয়ার পর আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রুবেল নিজে উপস্থিত থেকে আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘১৫ বছর পর আমার ভাইয়ের বউয়ের সন্তান হবে। ২৪ তারিখে ডেলিভারি। আমাকে ফোন দিতাছে। এখন আমি কী করমু? এই বিচার আপনারা সাংবাদিকরা করেন, না হইলে আমি করমু।’
এর আগে দুপুরে আবিদ হাসান রুবেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুমনের প্রগ্রাম ছিল পাড়াতলী বাজারে আর আমার প্রগ্রাম মধ্যনগর কাচেরকান্দি। সেখানে আমার এক বন্ধুর বাসায় দুপুরে খাওয়ার কথা ছিল। আমরা মধ্যনগর এলাকায় গণসংযোগ শেষে কাচেরকান্দি যাওয়ার পথে মামদিরকান্দির একটি ফাঁকা জায়গায় যাওয়ার পর হঠাৎ করে সুমনের দুটি গাড়ি আসে। একটি কালো হাইয়েস ও সিলভার কালারের একটি প্রাইভেট কার। তখন গাড়ির দরজা খুলে দুটি শর্টগান থেকে এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। সেখানে আমার সমর্থক রহমত উল্লাহ, সজিব, শাকিল ও মোমেন আহত হন। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমি ও আমার স্ত্রী বেঁচে গেছি।’
রাত সোয়া ৮টায় রায়পুরা থানার ওসি সাফায়েত হোসেন পলাশ বলেন, ‘আমি হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলছি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। দুপুরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে কি না তদন্ত করছি। বিস্তারিত তদন্তের পর বলা যাবে।’
খুলনা গেজেট/এইচ