অবশেষে আধুনিক কপিলমুনির স্বপ্নদ্রষ্টা রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর প্রতিষ্ঠিত ভরত চন্দ্র হাসপাতালটি (বর্তমানে কপিলমুনি হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠাকালীন নামেই ফিরেছে। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দপ্তর হতে পূর্বের নামে নামকরণে চিঠি ইস্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি শয্যাবৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসা সেবার সুযোগ রেখে দৃষ্টিনন্দন ভরত চন্দ্র হাসপাতালের নির্মান কাজ শুরু করতে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নোয়া (নোটিফিকেশন অব এ্যাওয়ার্ড) প্রদান করেছেন।
জানা গেছে, ঐতিহাসিক ও বর্ধিষ্ণু জনপদের বিশাল জনগোষ্ঠির চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মুজিবশত বর্ষ উদযাপনের বছরেই নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমনটি জানিয়েছেন একাধিক সূত্র। প্রায় ৩ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত ভরত চন্দ্র হাসপাতালটি একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রূপদানের অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে হাসপাতালের মূল পাঁচতলা ভবনের ২য় তলা পর্যন্ত নির্মানে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। ভরত চন্দ্র হাসপাতাল ভবন আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন হবে। থাকছে অপারেশন থিয়েটার। প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা যাবে বলে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে আপাতত নতুন ভবনটিতে থাকছে ২০ শয্যার সুবিধা। আধুনিক এই ভবন নির্মান কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯১৫ সালের ৭ এপ্রিল রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু ২০ শয্যা বিশিষ্ট যাদব চন্দ্র চ্যারিটেবল ডিসপেনসারী ও ভরত চন্দ্র হাসপাতাল হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন জেলা পরিষদ, হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতার প্রদেয় অর্থের লভ্যাংশ দ্বারা পরিচালিত হত। ভৌগলিক অবস্থান বিন্যাসে খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর সীমানা প্রায় ২০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ভরত চন্দ্র হাসপাতাল প্রায় অর্ধ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে একমাত্র সরকারী হাসপাতাল।
জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য স্যার পি সি রায় এর অনুপ্রেরণায় বিনোদ বিহারী সাধু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শিক্ষা, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য বাণিজ্যিক কেন্দ্র, টেকনিক্যাল স্কুল, উপসানালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে হাসপাতাল নির্মানে তৎকালীন সময়ে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সহ এক্স-রে মেশিন স্থাপন করেন। তৎকালীন খুলনা সদর হাসপাতালেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ছিলনা কোন এক্স-রে মেশিন। উর্দ্ধতন কর্মকর্তার বিশেষ অনুরোধে ভরত চন্দ্র হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি সদর হাসপাতালে নিজ খরচে ভবন নির্মান সহ প্রতিস্থাপন করা হয়, যাহা আজও দৃশ্যমান। অথচ প্রাচীনতম এ হাসপাতালের চিকিৎসার মানের কোন পরিবর্তন আসেনি। ভরত চন্দ্র (কপিলমুনি হাসপাতাল) হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জনবল এবং অবকাঠামো উন্নয়ন আন্দোলনের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব এরফান আলী মোড়ল ও অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শেখ নেছার আলী জানান, কপিলমুনি একটি জনপদ।ঐতিহাসিক এই জনপদের বিশাল জনগোষ্ঠির চিকিৎসা প্রদানে প্রয়োজনীয় জনবল এবং অবকাঠামোগত অবস্থা ভরত চন্দ্র হাসপাতালের নেই। সে কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সংসদ সদস্যের সুপারিশ সম্বলিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশায় নিয়োজিত এলাকার কৃতি সন্তানদের স্বাক্ষরিত এসংক্রান্ত আবেদন জমা দেয়া হয়। পরবর্তীতে দক্ষিণ খুলনার দু’জন কৃতি সন্তান সাবেক স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নের কার্যাদেশ প্রাপ্তি ও প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের হাসপাতালটির স্বনামে ফেরার সংবাদ পেয়ে আমরা আনন্দিত এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
খুলনা গেজেট/কেএম