সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক উল আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন অর্থাৎ আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী)। আদ-দ্বীন হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শনিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মহাসচিব ডা. নাহিদ ইয়াসমীন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ডা. নাহিদ বলেন, ‘আমরা তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি। আদ-দ্বীন হাসপাতাল প্রাঙ্গনে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর লাশ তার পল্টনে তার বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে জানাজার জন্য লাশ নেয়া হবে বায়তুল মোকাররমে। পরে বাদ জোহার তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে লাশ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে জানাজা শেষে বিকালে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। ’
গত ১৫ অক্টোবর ব্যারিস্টার রফিক উল হককে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর গত ২০ অক্টোবর রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভেন্টিলেশনে দেয়া হয়।
কর্মময় জীবন : সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং বাংলাদেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক শুধু একজন প্রতিথযশা আইনজীবীই ছিলেন না, ছিলেন একজন দানবীর। চিকিৎসক বাবার এ সন্তান ছিলেন আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।
সর্বোচ্চ আদালতের এ আইনজীবীর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার সূর্বণপুর গ্রামে ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর। বাবা মুমিন-উল হক পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। মা নূরজাহান বেগম। পড়াশোনা করেছেন কলকাতার চেতলা স্কুলে। ১৯৫১ সালে রফিক-উল হক ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করেন। এরপর আইনজীবী হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন।
পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালে বিলেত থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি নেওয়ার পর চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৬৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হন।
পরবর্তীতে ১৯৯০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। কিন্তু নেননি কেনো বেতন ভাতা।
১/১১ সালের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আইনজীবী ছিলেন।
২০১১ সালে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের চিকিৎসক স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার একমাত্র ছেলে ব্যারিস্টার ফাহিমুল হকও আইন পেশায় রয়েছেন।
রফিক-উল হক প্রতিষ্ঠা করেছেন বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, এতিমখানা, মসজিদ ও মেডিক্যাল কলেজ। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এখন একটি ১০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করছেন। এ ছাড়া ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন সুবর্ণ ক্লিনিক; ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা ছিলো এ আইনজীবীর। বারডেম হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ ও নূরজাহান ওয়ার্ড, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালের চেয়ারম্যান, আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান রফিক-উল হক। অন্তত ২৫টিরও বেশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এআইএন