খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  জান্নাতুল ফেরদৌস হত্যা মামলায় আনিসুল হককে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  খুলনা, বরিশালে আজ বৃষ্টি হতে পারে

ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে বুক চিতিয়ে লড়লেন আফিফ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স পার্ক পরিচিত ব্যাটিং স্বর্গ হিসেবেই। আর এখানে দক্ষিণ আফ্রিকা অজেয়। এমন সমীকরণ জেনেও বাংলাদেশ মাঠে নেমেছে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে। রোববার (২০ মার্চ) টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধন্ত নেন টাইগার দলপতি তামিম ইকবাল। পরিসংখ্যান বলছে, এ মাঠে ৪৮ ম্যাচের মধ্যে ২৭ ম্যাচে জয় পেয়েছে পরে ব্যাট করা দল।

তবে প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ জয় পাওয়ায় হয়তো আজও আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। উইনিং কম্বিনেশন ধরে রাখতে প্রথম ম্যাচে জয় এনে দেওয়া দল নিয়েই নামছে সফরকারীরা। কিন্তু অধিনায়কের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণ করে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের বাউন্সারে পরাজিত হয়ে বাংলাদেশ আজ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে করেছে ১৯৪ রান। বাংলাদেশের ইনিংসে বুক চিতিয়ে লড়লেন আফিফ হোসাইন। ১০৭ বলে ৭২ রান করেন এই তরুণ।

দক্ষিণ আফ্রিকা দলে আজ তিনটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে। চোট কাটিয়ে ফিরেছেন কুইন্টন ডি কক, বাদ পড়েছেন আগের ম্যাচে ব্যার্থ এইডেন মার্করাম। মার্কো ইয়ানসেনের বদলে দলে এসেছেন আরেক বাঁহাতি পেসার ওয়েইন পারনেল। আর অলরাউন্ডার আন্দিলে ফিকোয়াওর বদলে এসেছে বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার তাব্রেইজ শামসি।

বাংলাদেশের বিপক্ষে রিস্ট স্পিনাররা বরাবরই সফল। তাই অতীত সাফল্য দেখেই হয়তো একজন ব্যাটসম্যান কমিয়ে বাড়তি বোলার নিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় বলেই একটুর জন্য বেঁচে যান তামিম ইকবাল। ফিল্ডারের একটু সামনে পড়েছে তামিমের দেওয়া ক্যাচ। ওভার থ্রো থেকে রান পায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারায় দ্রুতই। লুঙ্গি এঙ্গিডির প্রথম ওভারে অস্বস্তিতে থাকা তামিম ফিরলেন ১ রান করেই। লুঙ্গির বলটা একটু বেশিই বাউন্স করেছিল। বাড়তি বাউন্স গ্লাভসের ছোঁয়া নিয়ে আকাশে উঠে গেছে। পয়েন্টের ফিল্ডারের কোনো কষ্ট হয়নি।

দলীয় ৭ রানে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেটও হারায় দ্রুতই। এবার আউট আগের ম্যাচের নায়ক সাকিব আল হাসান। রানের খাতা খোলার আগেই সাকিবকে ফেরান রাবাদা। লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব, কিন্তু রাবাদার বলের বাড়তি বাউন্সে ঠিক তামিমের আউটের পুনর্মঞ্চায়ন হল। সাকিবের ক্যাচ ফিল্ডার লুফে নিলো সহজেই। ৬ বল খেলে শূন্য রানেই ফিরলেন সাকিব।

লিটন তখনও ছিলেন আশার প্রদীপ হয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকান পেসারদের সামলাচ্ছিলেন দুর্দান্ত। পুল করে চারও মারলেন একটা। কিন্তু মরার সাধ জাগল তারও। রাবাদার শরীর লক্ষ্য করে মারা বাউন্সার খেলবেন নাকি খেলবেন না, এই দ্বন্দ্ব শেষে যখন ছেড়ে দিতে চাইলেন ততক্ষনে যে বড্ড দেরি করে ফেলেছেন লিটন। ব্যাটের আলতো স্পর্শ বলকে পৌঁছে দিয়েছে ডি ককের গ্লোভসে।

গত ম্যাচে ওয়ানডে ক্যরিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া ইয়াসির রাব্বিও ব্যর্থ আজ। ৩ বল ০ রানে ফিরতে পারতেন ইয়াসির। কিন্তু স্লিপে ক্যাচ ফেলেছেন মালান। জীবন পেয়ে অবশ্য কিছু করতে পারেন নি। রাবাদার করা সপ্তম ওভারের শেষ বলে ইয়াসিরের করার ছিল না কিছুই। দুর্দান্ত ইনসুইংয়ে বাউন্সার ইয়াসিরের গ্লোভস ছুঁয়ে ধরা দিলো ডি ককের গ্লোভসে।

অনেক আশা ছিল দলের আরেক সিনিয়র মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে। কিন্তু মুশফিক যেন প্রতিজ্ঞা করেই নেমেছিলেন উইকেট দেওয়ার। রাবাদা-লুঙ্গির বাউন্সারে খাবি খাওয়া মুশফিক আউট হতে হতে বেঁচে গিয়েছিলেন লুঙ্গির বলে। কিন্তু জীবন পেয়েও করতে পারেন নি কিছুই। বরং দৃষ্টিকটু ভাবে উপহার দিয়ে এলেন নিজের উইকেট। পারনেলের বল অতিরিক্ত বাউন্স করে তার ব্যাটে আসবে এই আশায় লেগ স্ট্যাপে পিচ করা নিচু বলটির দিকে চেয়ে চেয়ে দেখলেন পায়ে আঘাত করতে। প্রোটিয়াদের আবেদনে সাড়া দিতে খুব বেশি ভাবতে হয় নি আম্পায়ারকে।

৩৪ রানে পাঁচ উইকেট যাওয়ার পরে উইকেটে দুই নতুন ব্যাটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসাইন চেষ্টা করেন দলের হাল ধরতে। তরুণ আফিফ আর অভিজ্ঞ রিয়াদ বাকিদের ভুলে পা না দিয়ে খেললেন বলের গুণাগুণ বিচার করে। আফিফ শুরু থেকেই স্বাছ্যন্দ। রিয়াদ তাকে দিলেন যোগ্য সঙ্গ। ১০০ রানের নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় থাকা বাংলাদেশ ১০০ পার করে এই দুজনের ব্যাটিং নৈপুন্যেই।

১৫ ওভারে দুজনে গড়েন ৬০ রানের জুটি। দল যখন শতরানের দ্বারপ্রান্তে তখনোই বাঁহাতি রিস্ট স্পিনে প্রোটিয়া শিবিরকে সফলতা এনে দিলেন তাব্রেইজ শামসি। রিয়াদকে ফেরালেন ব্যক্তিগত ২৫ রানে। বাংলাদেশের স্কোর তখন ২৭.১ বলে ৬ উইকেট হারিয়ে ৯৪!

রিয়াদের বিদায়ের পরও আফিফ খেলেন নির্ভার ক্রিকেট। বাকিরা যে মাঠে আসা-যাওয়ার মাঝে থাকলেন, সেখানেই নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেলেন আফিফ। ৭৯ বলে ৭ চারে হাফ সেঞ্চুরি করার পথে একবারও ভুল করেন নি আফিফ। বরং প্রতিটি শটে যেন ঠিকরে বেরুচ্ছে আত্মবিশ্বাসের দ্যুতি।

সাবধানী মিরাজ-আফিফ মিলে গড়লেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড সপ্তম উইকেট জুটি। দুজনের জুটিতে ৪১তম ওভারে দেড়শ পেরোয় বাংলাদেশের ইনিংস। আফিফ মিরাজের জুটি ভাঙ্গে রাবাদা আবার আক্রমণে ফিরতেই। জোড়া শিকার করে নিজের দশম ওভারে পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। ৪৫তম ওভারের তৃতীয় বলে রাবাদার চতুর্থ শিকারে পরিণত হন ৭২ রান করা আফিফ। ১০৭ বলে ৮ চারের মারে এই রান করেন আফিফ। আফিফের পর মিরাজও ধরেন প্যাভিলিয়নের পথ। ৪৯ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলা মিরাজ ১টি চারের পাশাপাশি মারেন দুটি ছক্কাও।

 

খুলনা গেজেট/এএ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!