খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুষ্টিয়ার খোকসায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিন শিশু নিহত, আহত দুই
  দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
খুলনা আ’লীগের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে

ব্যক্তি বন্দনাবিহীন শোকাবহ পরিবেশ, গভীর রাতে কর্মীদের নির্ঘুম পোস্টারিং

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘদিন সরকারে থাকায় আগাছা-পরগাছা, ভুঁইফোড় সংগঠন ও হাইব্রিডদের উপদ্রব্যে অনেক ক্ষেত্রে অতিষ্ঠ আ’লীগের ত্যাগী-পরীক্ষিত তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে সম্প্রতি ভুঁইফোড় সংগঠন ও হাইব্রিড দমনে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয় আ’লীগ। একইভাবে দলের পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে না পড়া, ভুঁইফোড় সংগঠনে সম্পৃক্ত না হওয়া ও ব্যক্তি বন্দনা না করতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন শীর্ষ নেতারা। ফলে এবার জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে থাকছে না ব্যক্তি বন্দনা। গভীর রাতেও নগরীতে শোকদিবসের পোস্টার লাগাতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। এতে খুলনাতে সৃষ্টি হয়েছে শোকাবহ পরিবেশ। আগামীকাল ১৫ আগস্ট বাঙালী জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস।

দলীয় সূত্রমতে, গত ৫ আগস্ট বিজ্ঞপ্তিতে খুলনা আ’লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রজন্ম লীগ, নবীন লীগ, যুব স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু ছাত্রযুব প্রজন্মলীগসহ নানাবিধ নামে বেশ কিছু ভূঁইভোড় সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে। যা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের অনুমোদনকৃত নয়। যে বা যারা এধরনের সংগঠনের দায়িত্ব নিয়ে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে আ’লীগের ঘাড়ে দায়িত্ব চাপানোর অপচেষ্টা করছে তারা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব সংগঠন বিলুপ্ত করে নিজেকে পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখার জন্য আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ওইসব অগঠনতান্ত্রিক সংগঠনের জন্ম দেয়ার মধ্যদিয়ে কুচক্রী মহল আ’লীগের বড়ধরনের ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র করছে। এদের থেকে সর্তক থাকতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, মহানগর আ’লীগের সভাপতি সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, জেলা আ’লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, জেলার সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত কুমার অধিকারী, জাতীয় সংসদের হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস, খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবু প্রমুখ।
তারা বলেন, গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে কতিপয় সুযোগ সন্ধানী, অনুপ্রবেশকারী, মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন নামে অসাংগঠনিকভাবে আ’লীগের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠন পরিচয় দিয়ে অসামাজিক কর্মকান্ড করছে। যা সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে ভীষনভাবে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। বিএনপি-জামায়াত শিবিরের সদস্য এবং সমাজের চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা, ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীরা অসদুদ্দেশ্য নিয়ে অনুপ্রবেশ করছে।

পরদিন ৬ আগস্ট নগর ও জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নামে বেনামে ভুঁইফোড় সংগঠনে থাকতে পারবে না বলে হুশিয়ারি দেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ হাওলাদার ও ইমরান হোসেন পৃথক বিবৃতিতে ভূঁইফোড় সংগঠন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে আহ্বান জানান নেতকর্মীদের।
এর পরদিন ৭ আগস্ট বিজ্ঞপ্তিতে, খুলনা মহানগর যুবলীগের নাম ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি নিজ ইচ্ছা মতন কোন প্রোগ্রাম না করতে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন যুবলীগের আহবায়ক সফিকুর রহমান পলাশ ও যুগ্ম-আহবায়ক শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন।

তৃণমুল নেতাকর্মীরা বলছেন, আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে এবার ব্যক্তি বন্দনা নেই জাতীয় শোক দিবসের কর্মসুচিতে। বিগত দিনগুলোতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের চেয়ে স্থানীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত প্যানা-পোস্টার, গেট ও কর্মসুচিই বেশি প্রচার-প্রচারণা হতো। এবারের প্রেক্ষাপট সম্পুর্ণ ভিন্ন। গভীর রাত পর্যন্ত জাতীয় শোক দিবসের পোস্টার লাগাতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের।

নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আসাদুজ্জামান রাসেল, ৩০নং ওয়ার্ড যুবলীগের মোঃ রাজু মোল্যাকে দেখা গেছে গভীর রাতে মহানগর আ’লীগ ও যুবলীগের পোস্টার লাগাতে।
যুবলীগ নেতা মোঃ রাজু মোল্যা বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়ন হলে দেশে অনিয়ম-দুর্নীতি থাকতে পারে না, এটা আমার বিশ্বাস। সে জন্য এইদিনটিতে শুধু বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টে শহীদদের জন্যই; কোন ব্যক্তি প্রচারণার জন্য নয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার একটা ভিন্ন পরিবেশে মুজিববর্ষে জাতীয় শোকদিবসের কর্মসুচি পালিত হচ্ছে। সেজন্য আমরাও সাধ্যমতো অসহায় মানুষকে সহায়তা করছি।

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা বলেন, মহানগর আ’লীগের সকল ইউনিটে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসুচিতে শুধুমাত্র জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃতি ও খ্যাতিসমূহ তুলে ধরতে নির্দেশণা দেয়া হয়েছে। বাঙালী জাতি নিয়ে তার দীর্ঘ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় শোক দিবস আমাদেরকে সেটাই শিক্ষা দেয়। এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে তৃণমুল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!