খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮
বিশ্ব শিক্ষক দিবস ৫ অক্টোবর

বৈষম্য নিরসনে শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের বৈষম্য দূর করতে শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। আর যত দিন সরকারিকরণ সম্ভব হচ্ছে না ততদিন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মতো বেসরকারি শিক্ষকদেরও শতভাগ বেতন, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগে ‘শিক্ষা সার্ভিস কমিশন’ গঠন, চাহিদার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেওয়া, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির প্রথা বিলুপ্ত করা এবং বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি পদ্ধতি চালুর দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।

৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসের ঠিক আগের দিন সোমবার (৪ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের উদ্যোগে যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাকবাশিসের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. ইসহাক হোসেন, মহা-সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ কে এম আবদুল্লাহ, অধ্যক্ষ রহিমা খন্দকার, অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ ইউসুফ, অধ্যাপক ইলিম মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন, অধ্যাপক জহির উদ্দিন আজমসহ অনেকে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চলমান কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের বিশ্ব শিক্ষক দিবসে প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘শিক্ষকরাই শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে’। এই দিবসটি উপযাপনকালে সারাবিশ্বের শিক্ষকরা অতীতের সকল অর্জন ও ব্যর্থতার সমীক্ষা করবে। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে সম্মিলিতভাবে সচেষ্ট হবে, যাতে কেউ শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। কোভিড-১৯-এর কারণে শিক্ষাব্যবস্থার বিপর্যস্ত অবস্থা ও সকল প্রতিবন্ধকতাকে কিভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে সারা বিশ্বের মত আমাদের দেশের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনা অনুকূল অবস্থা ফিরে পেতে তৎপর রয়েছেন।

শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের প্রশ্নে আলোকপাত করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন ও শিক্ষা উপকরণ প্রদান করা হয় সত্য, কিন্তু শিক্ষকের মানোন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়।

সেজন্য প্রয়োজন প্রগতিশীল, মেধাবী ও সৃজনশীল ব্যক্তিদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করা। শিক্ষককে জ্ঞানসমৃদ্ধ, কুশলী ও দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকতা জীবনের প্রথম থেকেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কর্মের প্রয়োজনীয় সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষকের নায্য অধিকার ও মর্যাদার কথা বলতে গেলে বলতে হয়, এ বিষয়টি চরমভাবে উপেক্ষিত। আমাদের গোটা শিক্ষাব্যবস্থার প্রায় ৯৫ ভাগই পরিচালনা করে বেসরকারি শিক্ষক। আর একটি স্বাধীন দেশের জন্য এ বেসরকারি শিক্ষকতার অবস্থা অত্যন্ত লজ্জাজনক।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৈষম্যের অবসানকল্পে শিক্ষাব্যবস্থার সব স্তরকে সরকারিকরণের মাধ্যমে এক ও অভিন্ন ধারায় রূপান্তরিত করতে সরকার নীতিগতভাবে অঙ্গীকার করলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। শিক্ষকতা পেশা সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দাবি রাখলেও অবহেলা ও অবজ্ঞতার ফলে শিক্ষকতা পেশা ক্রমেই মেধাবীদের আকর্ষণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সে কারণে পৃথক ‘শিক্ষা সার্ভিস কমিশন’ গঠন করে অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালায় মেধাসম্পন্ন দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। তেমনিই সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের বৈষম্য দূর করে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বেসরকারি শিক্ষকদের সরকারি শিক্ষকদের অনুরূপ নিয়মিত বেতন-ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে প্রাইভেট টিউশনি, কোচিং বা অন্য কোন বাড়তি কাজের দ্বারা অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে নিজ দায়িত্ব পালনে বাধার সম্মুখীন হতে না হয়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এখনও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বেসরকারি শিক্ষকদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকলেও পদোন্নতির সুযোগ তেমন একটা নেই। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে রাজনীতিকদের অন্তভূর্ক্ত করার ফলে এবং পরিচালনা কমিটি গঠনে অসঙ্গতিপূর্ণ নীতিমালা থাকার কারণে বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরির কোন নিরাপত্তা নেই। যেহেতু সরকার বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতনের ১০০ শতাংশ ও প্রয়োজনীয় ভাতার আংশিক দিচ্ছে, তাই শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য অবিলম্বে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি প্রথা বিলুপ্ত করে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুরূপ নিয়মে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। সামগ্রিক অবস্থার আলোকে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, যোগ্য ও আদর্শ শিক্ষকরা এক চরম হতাশার মধ্যে দিন যাপন করছে। ফলে সৃজনশীল চিন্তার উন্মেষ ঘটার অবকাশ নেই বরং তাঁদের সাধারণ দায়িত্ব পালন করার স্পৃহাও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

এসব সংকট নিরসনে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের নেতারা শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণের দাবি জানান। আর যতদিন সরকারিকরণ সম্ভব না হয়, ততদিনের জন্য শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কয়েকদফা দাবি জানানো হয়। শিক্ষকদের দাবিগুলোর মধ্যে আছে, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মতবেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এবং বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দিতে হবে। সরকারি কলেজের মত একই পদ্ধিতিতে সমযোগ্যতা ও সমঅভিজ্ঞতা সম্পন্ন বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদে পদোন্নতি দিতে হবে এবং উচ্চতর ডিগ্রির জন্য উচ্চতর বেতন স্কেল দিতে হবে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় বদলি প্রথা চালু করতে হবে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মত আনুপাতিক হারে শিক্ষা প্রশাসনের (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষাবোর্ড, নায়েম ও এন.সি.টি.বি.) গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্যতাসম্পন্ন বেসরকারি শিক্ষকদের লিয়েন বা ডেপুটেশনে নিয়োগ দিতে হবে এবং মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারের স্বার্থে শিক্ষকদেরকে দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপে যোগদানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের মর্যাদা ও অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত ইউনেস্কো ও আই.এল.ও-এর সনদ ১৯৬৬ বাস্তবায়ন করতে হবে।

শিক্ষকদের দাবিগুলোর মধ্যে আরও আছে, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের জন্যে স্বতন্ত্র ‘শিক্ষা সার্ভিস কমিশন’ গঠন করতে হবে। কোন অবস্থাতেই স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দানকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নিয়মিতভাবে একাডেমিক পরিদর্শন ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে দলাদলি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা দূর করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে গভর্নিংবডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রথা বিলুপ্ত করে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার অনুরূপ নিয়ম-নীতি প্রবর্তন করতে হবে। সরকারি কলেজের মত বেসরকারি কলেজের জনবল কাঠামো প্রবর্তন করতে হবে এবং বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স কলেজে পাঠদানরত শিক্ষকদেরকে এমপিওভুক্ত করতে হবে। সরকারি কলেজের মত বেসরকারি শিক্ষকদেরও পূর্ণাঙ্গ পেনশন চালু করতে হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে অপরিকল্পিতভাবে যত্র-তত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা না করে জরিপের মাধ্যমে কেবল মাত্র চাহিদার ভিত্তিতে (Need based) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিতে হবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!