ভারতের পেট্রাপোলে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আমদানি পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাড়ে পাঁচ হাজার ট্রাক। এ কারণে দু’দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। এ জটিলতা ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করে ট্রাক থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিবছর ভারতের সঙ্গে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এ থেকে বছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে বেনাপোল কাস্টমস হাউস। বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৭-৮শ’ ট্রাক মালামাল ভারত থেকে আমদানি হয়। যানজটের জটিলতার কারণে বর্তমানে তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩-৪শ’ ট্রাকে। ওপারে বনগাঁও পৌরসভার মেয়র শংকর আঢ্য ডাকু কালীতলা পার্কিং নামে একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পার্ক তৈরি করে সেখানে আমদানি করা মালামাল বোঝাই ট্রাকগুলো জোর করে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এরপর প্রতি ট্রাক থেকে ড্যামারেজ বাবদ দুই হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। বর্তমানে একটি ট্রাক মালামাল নিয়ে বাংলাদেশে পৌছাতে ১৫ থেকে ২০ দিন করে সময় লাগছে। যার পুরো চাঁদার অর্থ বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে মোটা অঙ্কের লোকসানের কথা ভেবে অনেকেই বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন।
বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানান, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের পাশাপাশি ভারত থেকে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। ওপারে পণ্য আমদানিতে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব পড়ছে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও পড়ছে প্রভাব। ২ মার্চ সকালে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান আমদানিকৃত ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় বাড়াতে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, বেনাপোলের ওপারে এখন ভয়াবহ পণ্যজট লেগেই রয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বন্দরের ওপারে অপেক্ষায় আছে। পেট্রাপোলের কালিতলা পার্কিং থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে এখন প্রায় ১৫ দিন লেগে যাচ্ছে। ফলে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের যেমন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তেমনি বেড়ে যাচ্ছে আমদানি ব্যয়।
ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে স্থলপথে পণ্য আমদানি করতে বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বনগাঁও পৌরসভার মেয়র শংকর আঢ্য ডাকুর নেতৃত্বে তার লোকজন প্রতিটি পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক ২০ দিন ওপারে আটকে থাকলে তাকে ৪০ হাজার রুপি পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকরা মোটা অঙ্কের আর্থিক লোকসানে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আমদানী হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। পণ্য আমদানিতে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ও কমে যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, ভারতীয় পেট্রাপোল কালিতলা পার্কিং-এ বর্তমানে সাড়ে ৫ হাজার পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকে আছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে ও ট্রাক সংখ্যা বাড়াতে ভারতীয় কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে যাচ্ছি। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
খুলনা গেজেট/কেএম