তিনি বলেন, অন্যান্য বন্দরে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে সে হিসেবে বেনাপোল দিয়ে আমদানির পরিমাণ অনেক কম। কোন দিন ২ ট্রাক, কোন দিন ৫ ট্রাক, আবার কোন দিন আসছে ও না।
অবশ্য ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দামে কেনা হলেও তার প্রভাব পড়ছে না ভোক্তা পর্যায়ে। এই পেঁয়াজই বিভিন্ন কাঁচাবাজারে হাত বদলে চারগুণ দামে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
গত সোমবার (৫ জুন) সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর ওই দিন রাতে তিন ট্রাকে ৭৫ টন আমদানির মধ্য দিয়ে শুরু হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি।অর্থ্যাৎ ১১ দিনে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে এক হাজার ১০ টন।
জানা যায়, পেঁয়াজ উৎপাদন করে কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ রাখা হয়েছিল। দেশে চাহিদার বিপরীতে আমদানি ও পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে গত মে মাসের মাঝামঝি থেকে দাম বাড়াতে থাকে। ৩০-৩৫ টাকার পেঁয়াজ কিনতে হয় ৯০-১০০ টাকা কেজি। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল সাধারণ মানুষকে। অবশেষে বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। আমদানির খবরে কয়েকটি জেলায় পেঁয়াজের দাম কমে আসলেও যশোরের বিভিন্ন স্থানে এখনো দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকার বেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজার মনিটরিং এর অভাবে ব্যবসায়ীরা যার কাছ থেকে যা পাচ্ছে তাই নিচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী হেমন্ত কুমার সরকার জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির জন্য কয়েকশ‘ টন ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) করেছেন আমদানিকারকরা। সেগুলোর মধ্যে অল্প অল্প করে পেঁয়াজ আসছে বেনাপোল দিয়ে। ভোমরা, হিলি ও সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়ে থাকে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর বেনাপোল দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। তবে আমদানির পরিমাণ অনেক কম। আমদানি করা পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা যাতে দ্রুত খালাস করতে পারেন তার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া আছে এবং তা দ্রুত খালাস হচ্ছে।
অপরদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে প্রতি কেজি ১০ থেকে ১২ টাকা দামে। এই পেঁয়াজই বগুড়ার কাঁচাবাজারে হাত বদলে চারগুণ দামে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া একটু নিম্নমানের পেঁয়াজ প্রকারভেদে কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর ও বগুড়ার রাজাবাজারে দেখা গেছে এ চিত্র।
ভারতের বালুরঘাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশটির ইন্দোর, মহারাষ্ট্র ও নাসিক থেকে বংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়। দেশে আসা পেঁয়াজ জড়ো করা হয় বালুরঘাটে। সেখানে ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজিতে। ভারত থেকে ট্রাকে ভাড়া বাবদ কেজি প্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা খরচ হয় ব্যবসায়ীদের।
সেই পেঁয়াজ বাংলাদেশে এসে জেলা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। বৃহস্পতিবার ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বাংলাদেশের হিলি পানামা পোর্টের ভেতর প্রকারভেদে বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা কেজিতে। বগুড়ায় আসার পর এই পেঁয়াজের দাম হয়ে যাচ্ছে ৫০ টাকা।
দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্যের কথা চিন্তা করে বেশ কিছুদিন আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছিল। এ পরিস্থিতিতে বাজার হয়ে ওঠে অস্থির। এখন আমদানি শুরু হলেও বাজারে পেঁয়াজের দাম খুব একটা কমেনি। ভারত থেকে যে দামে আমদানি করা হচ্ছে, এর প্রায় চার গুণ দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।
আমদানির অনুমতির পর দিনাজপুরের হিলি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে টনে টনে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। ৯ জন ব্যবসায়ী এসব পেঁয়াজ আমদানি করছেন।
তিন স্থলবন্দরের কাস্টমস স্টেশনের তথ্যে দেখা যায়, প্রতি চালানে কেজি প্রতি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১২ থেকে ১৬ সেন্টে। ডলারের বিনিময়মূল্য ১০৮ টাকা ১৭ পয়সা ধরে মানভেদে আমদানিমূল্য দাঁড়ায় ১৫ টাকার মধ্যে। প্রতি কেজিতে কর গড়ে সাড়ে ৩ টাকা। এ হিসাবে শুল্ক-করসহ পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ পড়ে ১৭ থেকে ১৮ টাকা।
খুলনা গেজেট/কেডি