ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রায় ২২ লাখ টাকাসহ আটক হওয়া যশোরের বেনাপোল কাস্টম হাউসের বরখাস্তকৃত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খন্দকার মুকুলের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে।
রোববার দুর্নীতির মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণের ওই টাকা নিজ দখলে রাখা ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা করা হয়। দুদক যশোরের উপপরিচালক আল আমিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। আসামি খন্দকার মুকুল হোসেন টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার কাঁকড়াজান গ্রামের খন্দকার আহসান হাবীবের ছেলে।
মামলায় বলা হয়েছে, গত বছরের ২৬ আগস্ট সকাল ৮টায় ইউএস বাংলা বিমানে যশোর থেকে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে মুকুল যশোর বিমান বন্দরে পৌঁছান। বোর্ডিং পাস করার সময় বিমান বন্দরের স্ক্যানিং মেশিনে মুকুলের ব্যাগে বিপুল পরিমাণ টাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। ওইসময় বিমান বন্দরের সিকিউরিটি কর্মকর্তা টাকা বহনের কারণ জানতে চাইলেই তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন ও কর্মকর্তার সাথে অশোভন আচরণ করেন। একপর্যায়ে সিকিউরিটি কর্মকর্তা তাকে নির্দিষ্ট বিমানে উঠানোর ব্যবস্থা করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এভিয়েশন সিকিউরিটি গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন। মুকুল ঢাকায় পৌঁছালে এভিয়েশন সিকিউরিটি গোয়েন্দা কর্মকর্তা তাকে তল্লাশি করে ২২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা উদ্ধার করেন। তখন টাকার উৎসের ব্যাখ্যা দিতে তিনি ব্যর্থ হন। পরে তাকে ঢাকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে টাকাসহ হস্তান্তর করা হয়। ঢাকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাকে বেনাপোল কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় বেনাপোল কাস্টমস তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। বিষয়টি জানতে পেরে যশোরের দুদক কর্মকর্তারা বেনাপোল কাস্টমসে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা ও মুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু টাকার উৎস সম্পর্কে তিনি সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন। এরপর বিষয়টি নিয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ে মামলা করার অনুমতি প্রার্থনা করা হয়। অনুমতি পাওয়ার পর রোববার দুপুরে এ মামলা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপপরিচালক আল আমিন বলেন, প্রাথমিকভাবে তারা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত মামলার করার আবেদন জানান। কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে দুদক কার্যালয়ে এ মামলা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী এ মামলার নথি সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হবে।
তিনি বলেন, তদন্তকালে এ ঘটনার সাথে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি প্রমাণ পেলে তাদেরকেও এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মুকৃল বর্তমানে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হেফাজতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের উপপরিচালক। যদি তাকে আটকের প্রয়োজন হয় তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, খন্দকার মুকুল হোসেন ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ক্যাশিয়ার পদে যোগদান করেন। এরপর তিনি ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি ২০২০ সালের নভেম্বরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে যোগদান করেন। এরপর তিনি বেনাপোল বন্দরের ৩১ নম্বর ওয়েব্রিজসহ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সাধারণ পূর্ত শাখায় দায়িত্বপালন করেন। অভিযোগ রয়েছে তিনি বেনাপোল কাস্টমস হাউজে চাকরি করে দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন।
খুলনা গেজেট/এমএম