খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  মহাখালীতে সড়ক-রেললাইন অবরোধ শিক্ষার্থীদের, সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ

বেনজীর ও তার পরিবারের দুর্নীতি তদন্তে দুদকের কমিটি

গেজেট ডেস্ক

অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যহার করে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (২২ এপ্রিল) সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন।

দুদক সচিব বলেন, গত ৩১ মার্চ সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি প্রতিবেদন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে ১ ও ২ এপ্রিল আরও কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় একই প্রকৃতির অভিযোগ প্রকাশিত হয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর ৩নং বিধির আওতায় কার্যক্রম শুরু করা হয়।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৫ নম্বর ধারার বিধানমতে বর্ণিত অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই ২ জন কমিশনার দেশের বাইরে অবস্থান করায় এবং ঈদুল ফিতরের ছুটি থাকায় সব কমিশনারের উপস্থিতিতে কমিশনের পরবর্তী সভায় (১৮ এপ্রিল) সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়টি অনুমোদিত হয়। সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি মোতাবেক নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনুসন্ধান সমাপ্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুদকে তাকে ডাকা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, এই অনুসন্ধানের জন্য কমিশন সভায় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে তদারকি করার জন্য একজন তদারককারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। অনুসন্ধান চলাকালে অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় যা যা প্রয়োজন সব কিছু বিধি মোতাবেক করা হবে।

তিন সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও সহকারী পরিচালক জয়নাল আবেদীন।

এর আগে, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাউদ্দিন রিগ্যান হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন। রিটে দুদক চেয়ারম্যান ও সচিবসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়।

জানা গেছে, বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে রিটের একটি কপি হাতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। সেখানে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এর আগে, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ৩৪ বছর ৭ মাস চাকরি করে গত ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর দেখা যায়, বেনজীর আহমেদ তার স্ত্রী ও কন্যাদের নামে অঢেল সম্পত্তি অর্জন করেছেন, যা তার আয়ের বিচারে অভাবনীয়।

গত ৩১ মার্চ দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘ঢাকায় বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে নতুন করে আলোচনায় উঠে আসেন পুলিশের সাবেক আইজিপি ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে অঢেল সম্পদ গড়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেনজীরের অঢেল সম্পদের মধ্যে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে তার বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার পাশে বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার।

পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি।

অথচ গত ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদের বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মতো হওয়ার কথা।

এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি পাঠিয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনও জানান, বেনজীর আহমেদ তার পদের অপব্যবহার করে তার আয়ের তুলনায় প্রতিবেদনে উল্লিখিত সম্পত্তিগুলো অধিগ্রহণ করেছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক এই মহাপরিদর্শক, তার স্ত্রী, বড় মেয়ে এবং ছোট মেয়ের নামে থাকা অঢেল সম্পদ কীভাবে অর্জিত হয়েছে, তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদককে অনুরোধ করেন তিনি।

খুলনা গেজেট/এমএম/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!