সাতক্ষীরায় প্রকল্পের কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হলেও অদ্যাবধি কাজ শুরু হয়নি উপকূলীয় শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনীর উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধের পাঁচটি পয়েন্টের কোথাও। কাজের অগ্রগতি না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নেও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। কাজের ধীরগতির কারণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি এই জরিমানা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাইকার অর্থায়নে ২০২২ সালে প্রায় ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরা পারি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-১ এর আওতাধীন ৫নং পোল্ডারে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধের পাঁচটি পয়েন্টে কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কার্যাদেশ পায় জেভি ডকইয়ার্ড নামীয় একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দুই বছর মেয়াদী উক্ত প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা। অথচ ২০২৫ সালের মাঝামাঝি এসেও কাজের মাত্র ২০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, প্রায় আড়াই বছর অতিক্রান্ত হলেও শুধুমাত্র বালুভর্তি জিওব্যাগ প্লেসিং করেই উধাও হয়ে গেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রায় ৯৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই প্রকল্পের আওতাধীন বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার বাসবাসকারি মানুষের মধ্যে আসন্ন বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে তৈরী হয়েছে চরম দুশ্চিন্তা। কারণ বর্ষা শুরুর আগে অথবা মাঝামাঝি সময়ে সাগরে সৃষ্ট নিম্মচাপ থেকে শুরু হয় ঘূর্ণিঝড়। এসব ঘূর্ণিঝড়ের কোন না কোনটা উপকূলে আঘাত হানে। আর এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় উপকূলের বেড়িবাঁধ। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। সময় মত বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়ায় উদ্বিগ্ন উপকূলের মানুষ।
এদিকে বিষয়টি শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকালে পাউবো কর্তৃপক্ষসহ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সরজমিনে ভাঙনকবলিত অংশগুলো পরিদর্শন করেছেন শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন। এসময় কাজের ধীরগতির কারণে জেভি ডকইয়ার্ড নামীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে তাৎক্ষণিক ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জেভি ডকইয়ার্ড নামীয় উক্ত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার পাশাপাশি আসন্ন বর্ষা মৌসুমের মধ্যে সিংহভাগ কাজ শেষ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। এছাড়া যেকোন উপায়ে লোকালয়ে পানি ঢোকা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণেরও পরামর্শ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন জানান, কাজে গতিহীনতার কারণে পাউবো’র পক্ষ থেকে ঠিকাদারকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া কাজের গতি বৃদ্ধি করে বর্ষা মৌসুমের আগে ভাঙন কবলিত অংশসমূহ সুরক্ষিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (শ্যামনগর পওর উপ-বিভাগ) মো. ইমরান সরদার জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে পাউবোর পক্ষ থেকে ডিজাইন করে ঢাকায় প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হবে। পরক্ষণে ঢাকা থেকে টিম এসে প্রয়োজনীয় মাটির পরিমাপ সংগ্রহ করেই মাটির কাজ শুরু করা হবে। এছাড়াও কাজে গতিহীনতার কারণে ঠিকাদারকে ২০ লাখ জরিমানা করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টিএ