জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযানে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা প্রথম স্থান অধিকার করেছে। একটি টেকসই ও স্বত:স্ফূর্ত কার্যক্রমে পরিণত করার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুপ্রাণিত ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণে বিশেষ অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার রামপাল উপজেলা প্রশাসনকে প্রথম স্থান মনোনীত করেছে সরকার।
সূত্রে জানা যায়, ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার’ মনোনয়ন চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এর সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত পদক সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় অন্যদের মধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, এমপি, সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার খানম, মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি, বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা এর উপাচার্যগণ এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু-সহ কমিটির অন্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার- ২০১৯ রামপাল উপজেলা প্রথম হওয়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলা চত্বর ঘিরে বিভিন্ন ফলজ, ভেসজ ও ঔষধিসহ নানান রকম ফুলের রাজ্যে অন্যরকম এক দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ। কি গাছ নেই সেখানে? উপজেলায় আশা বিভিন্ন ভুক্তভোগীরা বিচার সালিশ ও নানান কাজে আসা বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ করেছেন এর ভূয়সী প্রশংসা। দূর্বল মন এখানে আসলে যেনো একদণ্ড শান্তি দেয়, দেয় সাহসও।
উপজেলা চত্তর ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন গাছ যেমন- জামরুল, জাম, আতা, বেল, কাঁঠাল, আমলকী, বয়রা, হরতকী, লেবু, বউয়া, ডালিম, চালতা, পেয়ারা, বিভিন্ন প্রজাতির কলা গাছ ও বরোই গাছ, আপেল, নারিকেল, জলপাই, আতা, আঁখ, লেবু, কাঁঠবাদাম, সজনে গাছ, করমচা, পেঁপে, কামরাঙা, খেজুরগাছ, নীমগাছসহ নানান প্রজাতির গাছ। এছাড়া ফুলেম মধ্যে রয়েছে, গোলাপ, বকুল, চন্দ্রমল্লিকা, হাসনাহেনা, কাঠগোলাপ, রংঙন, বেলিফুল, রক্তগোলাপ, কদমফুল, লালগোলাপ, নীলকণ্ঠ, জবাফুল, কাগজিফুল, চ্যামেলি, চায়নাটগর, মাইকফুল, রজনিগন্ধাসহ আরো অনেক প্রজাতির ফুলগাছ। বৃক্ষ রোপণে এই সফলতায় কায়িক পরিশ্রম ও দেখভাল করেছেন এবং এখনো পরিচর্যা করছেন, ইউএনও অফিসের নাজির তারিকুল ইসলাম পলাশ এর তর্তাবধায়নে জাকির হোসেন ও আতিকুল ইসলাম।
কথা হলো উপজেলায় আশা এ্যাডভোকেট দিব্যেন্দু বোস এর সাথে তিনি জানান, পরিবেশ ও নান্দনিকতায়ই বলে দেয় রামপাল উপজেলা পরিষদ একটি স্বচ্ছ ও রুচিসম্পন্ন স্থান। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। একটি উপজেলা চত্বর যে এতো সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজানো যায় তার বাস্তব উদাহরণই আমাদের এই রামপাল উপজেলা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে যোগদানের পরই লোনাজল বেষ্টনী মরুভূমি রামপাল উপজেলা চত্বরকে সুসজ্জিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন তুষার কুমার পাল। চার বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় পর্যায়ক্রমে গড়ে ওঠে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, বনজও ঔষধি গাছের।
এ বিষয়ে মেহেরপুর সাবেক রামপাল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তুষার কুমার পাল জানান, আমি রামপালে যোগদানের পর অফিসে প্রবেশ করলে দেখতে পাই চারিদিক মরুভূমির মত খা খা করছে। তাই চিন্তা করলাম সৌন্দর্য বর্ধনে যদি কিছু করা জায় তাহলে এখানে সেবা প্রত্যাশিরা ও আমাদের একটি মনের পরিবর্তনে রুপান্তিত হবে। তবে প্রাথমিকভাবে নতুন ভবনের মাঠে বলু থাকার কারণে বেশ প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছিলো। পরে বলু সরিয়ে নতুন মাটিদ্বারা ভরাট করে গাছ রোপণ করি এবং সফলও হই। পাশাপাশি গরু-ছাগলের উপদ্রব ঠেকাতে জনগণকে অবহিত করলে তারাও আমাদের সহযোগীতা করে উপজেলা চত্তরটি সৌন্দর্য বর্ধণে সাহায্য করেছেন। আমি মনে করি প্রতিটি সরকারি অফিসের পাশে রাস্তা, মাঠ ও পতিত জমিতে সৌন্দর্য বর্ধণে বিভিন্ন ফলজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করা যায় তাহলে যেমন অফিসের সৌন্দর্য বাড়ে তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেঁচে থাকতে আমাদের সহায়তা করে।
এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কবির হোসেন বলেন, আপনারা জানেন যে, তুষার স্যার যখন এই উপজেলায় ইউএনও ছিলেন তখন তিনি জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষয়ক্ষতি এই রামপাল উপজেলার মত জায়গায় যেখানে লবন পানির আদিত্য বলা যায় মরুভূমিতে স্যার একটি সৌন্দর্যের বনায়নের বিপ্লব ঘটিয়েছেন। আমাদের ইচ্ছা আছে বনায়নের এই কার্যক্রমটা ধারাবাহিকভাবে বজায় রেখে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নতুন রাস্থার দু-পাশে, ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ও সরকারি বিভিন্ন সপ্তরে এই বনায়ন রোপণ অব্যাহত রাখার এবং আমরা বলতে পারি রামপাল উপজেলা চত্বর বাংলাদেশের মধ্যে একটি দর্শনীয় স্থান হতে যাচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এনএম