রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলের পর পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে দেশের প্রতিটি সেক্টরে। ক্রীড়াঙ্গনও ব্যতিক্রম নয়। সবচেয়ে প্রভাবশালী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) শীর্ষ পর্যায়েও রদবদল হচ্ছে। এবার বিসিবির ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জড উইংসেও সংস্কার দাবি সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারদের। প্রতিবন্ধী ক্রিকেট উইংস প্রতিবন্ধীরাই পরিচালনা করতে চান বলে দাবি তুলেছেন বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ মহসিন।
হুইল চেয়ার ক্রিকেট ক্লাব, ব্লাইন্ড ক্রিকেট ক্লাব নামে নানা দলের কার্যক্রম থাকলেও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেটের কোনো ধরাবাধা কাঠামো ছিল না। তাদের এক ছাতার নিচে আনতে বিসিবির উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছিল বহু আগে থেকেই। ২০২১ সালে আকরাম খানকে ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যদিও তিনি তেমন কিছু করতে পারেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন মহসিন।
ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড বিভাগে নিজেদের অংশগ্রহণের জোরালো দাবি জানিয়েছেন মহসিন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অধীনে প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনার জন্য যে উইংস রয়েছে, সেই উইংসের দায়িত্ব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দেওয়ার বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যাবে এবং তাদের নিজস্ব চাহিদা ও সমস্যাগুলো ভালোভাবে বোর্ডে তুলে ধরা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক আরও বলেন, এই ধরনের উদ্যোগ নিলে প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা যাবে এবং তাদের উন্নতির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে। বিসিবির উচিত হবে এই বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করা এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খানের পদত্যাগ দাবি করেছেন মোহাম্মদ মহসিন। তিনি বলেন, আকরাম ভাইকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রতিবন্ধী উইংসের সে কিন্তু কোনো ধরনের কাজই করেনি। বরং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে দুই কোটি টাকা টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে, সেখান থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পায়নি প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রা।
ক্রিকেটের পাশাপাশি ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে কাজ করা মহসিন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড বিভাগের দায়িত্ব নিতে চান। তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমি প্রতিবন্ধী ক্রিকেট নিয়ে কাজ করছি। আমার আগে কেউ কাজ করেনি। আমাদের সুযোগ সুবিধা কিংবা অসুবিধাগুলো কোনো সুস্থ মানুষ সেভাবে বুঝবে না। আমি সুযোগ পেলে দায়িত্ব নিতে চাই।
আরও কিছু দাবি জানিয়েছেন প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রা। এই দাবিগুলো পূরণ হলে প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রা আরও ভালোভাবে নিজেদের প্রতিভা প্রকাশ করতে পারবেন এবং সমান সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে সমাজে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের দাবিগুলো নিম্নরূপ-
পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা : প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম, এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য যথাযথ আর্থিক সহায়তা ও স্পন্সরশিপ প্রদান।
প্রশিক্ষণ এবং কোচিং সুবিধা : প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং অভিজ্ঞ কোচের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের সুযোগ নিশ্চিত করা।
মানসম্পন্ন খেলার সরঞ্জাম : প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের বিশেষ চাহিদা অনুযায়ী খেলার সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান।
অবকাঠামোগত সুবিধা : প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের জন্য খেলাধুলার উপযোগী মাঠ, জিমনেসিয়াম, এবং অন্যান্য সুবিধা তৈরি করা।
সামাজিক স্বীকৃতি এবং মর্যাদা : প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের সমাজে এবং খেলাধুলার জগতে সমান মর্যাদা এবং স্বীকৃতি দেওয়া।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ : প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের জন্য আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ এবং সমর্থন প্রদান।
স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্বাসন সুবিধা : খেলাধুলার সময়ে বা পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা এবং পুনর্বাসনের সুবিধা নিশ্চিত করা।
কর্মসংস্থানের সুযোগ : খেলা শেষ করার পরও তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
খুলনা গেজেট/এএজে