শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বক্কর ছিদ্দীক বলেছেন, দেশের উন্নয়নে ও বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নেতৃত্ব দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়া দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্র্যান্ডিংয়ের আওতায় আনার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। যাতে করে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ভিত্তিক স্বতন্ত্র অর্জন ও সাফল্য চিহ্নিত করা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যের এই স্ব স্ব ক্ষেত্র জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বতন্ত্র একাডেমিক মহাপরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবহার বিষয়ে পরিকল্পনা থাকা দরকার।
আজ আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ তাজউদ্দীন আহমেদ ভবনের উপাচার্যের সভাকক্ষে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কিত এক উপস্থাপনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে না পারলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তারুণ্যের সমাবেশকে সৃজনশীল দিকে নিয়ে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে হবে। সহশিক্ষাকার্যক্রমের মাধ্যমে প্রাণচাঞ্চল্য ও প্রতিযোগিতামুখী করতে হবে।
দেশের কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে উচ্চশিক্ষার অবস্থা হতাশাব্যঞ্জক বলে উল্লেখ করে সচিব বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই এখন কঠিন অধ্যবসায় নেই, প্রতিযোগিতা নেই। লেখাপড়া যেনো খেলাধুলার মতো হয়েছে। ফার্স্ট ক্লাসের ছড়াছড়ি, কিন্তু বাস্তবে শিক্ষার্থীরা ন্যূনতম জ্ঞান অর্জন করতে পারছে না।
তিনি বলেন, স্বাধীনতোত্তর নতুন প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় জনমানসে স্বতন্ত্র ভাবমূর্তি ও মর্যাদার আসন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের নেতৃত্বে শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়নে যে গতি ফিরেছে তা আশাব্যঞ্জক বলে উল্লেখ করেন। তিনি সফট অবকাঠামো প্রকল্পসহ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা যুগোপযোগী বলে অবহিত করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশবিদ্যালয় করোনাকালীন স্থবিরতা কাটিয়ে উঠে গতি ফিরে পেয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে আগামী দুই বছরের মধ্যেই চলতি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। তিনি বিশেষ করে গবেষণা ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপও তুলে ধরেন। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্বমান অর্জনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্চুয়াল প্রযুক্তিগত উন্নয়নে যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা। সভা সঞ্চালনা করেন এবং সূচনা বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। পাওয়ার পয়েন্টে সংশ্লিষ্ট অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অগ্রগতি উপস্থান করেন প্রকল্প পরিচালক ড. মো. হাসানুজ্জামান। ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সফট অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুহা. মাহবুবুস সোবহান ও আইসিটি সেলের সেকশন অফিসার অতীশ দীপঙ্কর বিশ্বাস।
এসময় অবকাঠামো উন্নয়ন তদারকি কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. খো. মাহফুজ উদ দারাউন, সদস্য প্রফেসর ড. মো. লস্কর এরশাদ আলী, সহযোগী অধ্যাপক মারুফ হোসেন এবং সহকারী অধ্যাপক মাহমুদ উজ জামান, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান ও সচিবের সফরসঙ্গীসহ খুলনার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে সচিব অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পভুক্ত দশতলা জয়বাংলা একাডেমিক ভবন, মেডিকেল সেন্টারের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি ফিরে পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। এর আগে শিক্ষা সচিব বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছালে উপাচার্য তাঁকে স্বাগত জানান। এসময় তাঁকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। উপাচার্য সুন্দরবনের ওপর তাঁর লিখিত একটি গবেষণা গ্রন্থ শিক্ষা সচিবকে উপহার দেন।
খুলনা গেজেট/ আ হ আ