অবশেষে অপেক্ষা শেষ হতে চলেছে। এক বছর ধরে দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বৈঠকের মধ্য দিয়ে শীর্ষ সম্মেলনের যে সলতে পাকানো চলছিল, আজ শনিবার তা বাস্তবায়িত হওয়ার দিন। শনি ও রোববার দুই দিন ধরে বিশ্বের ২০টি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ বৈশ্বিক সমস্যার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে যা কিনা আক্ষরিক অর্থেই হতে চলেছে এক রাজসূয় যজ্ঞ।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের শুরু শনিবার হলেও গতকাল শুক্রবারই শুরু হয়েছে তার প্রারম্ভিক পর্ব। বহুপক্ষীয় এই আসরের অবসরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মোট ১৫টি দেশের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবেন। গতকাল সন্ধ্যায় তা শুরু হয়েছে। গতকালই ঢাকা থেকে দিল্লি পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোদি তাঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সারেন লোককল্যাণ মার্গের সরকারি বাসভবনে। নিজের বাসভবনে মোদি গতকাল তিন দেশের সঙ্গে বৈঠক করেন। শেখ হাসিনার আগে আলোচনায় বসেন মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ জগন্নাথের সঙ্গে, পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। বাকি নেতাদের সঙ্গে মোদির আলোচনা হবে শনিবার শীর্ষ সম্মেলনের অবসরে। এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র বিশেষ অতিথি হিসেবে মোদি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজেরা গতকালই নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন। অন্য অতিথিরাও রাতের মধ্যেই এসে যাবেন। সে জন্য সারা দিল্লিতে সাজ সাজ রব।
গতকাল থেকেই টানা তিন দিন রাজধানী রাজ্যে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র ও অতিথিদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে প্রধান রাজপথগুলো যানমুক্ত করে রাখা হয়েছে। চমৎকারভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে গোটা রাজধানী। ঢেকে দেওয়া হয়েছে যাবতীয় দৃশ্যদূষণ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরগরম ও আন্দোলনকর্মীরা সরব হলেও ‘বৃহত্তর স্বার্থ’-এ সরকার এটুকু ত্যাগ স্বীকারে বাধ্য করেছে নাগরিক সমাজকে। সম্মেলন সার্থক করে তোলাই সরকারের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান।
কিন্তু তা হবে কি না, সেই সম্ভাবনা ঘিরেই গড়ে উঠেছে জল্পনা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গত বছর ইন্দোনেশিয়ার বালি সম্মেলনে যে মতানৈক্যের শুরু, গত এক বছরে সেই তিক্ততা বেড়েছে বৈ কমেনি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো চায়, ‘যুদ্ধবাজ’ রাশিয়ার নিন্দা করে জি-২০ প্রস্তাব গ্রহণ করুক। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের তাতে আপত্তি তীব্র। জি-২০ সনদ অনুযায়ী, সব সিদ্ধান্ত হতে হবে সর্বসম্মত। তা না হওয়ার কারণেই সর্বসম্মতভাবে দিল্লি ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দিল্লির আয়োজনও ত্রুটিমুক্ত হতে পারল না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এই সম্মেলনে না আসায়। তবু এই আয়োজনকে ভারতের শাসক দল বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চমকপ্রদ সাফল্য হিসেবে অভিহিত করছে। জি-২০ সম্মেলন তাদের কাছে হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক হাতিয়ার।
জি-২০ সম্মেলনে সভাপতিত্বকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহারের অভিযোগ মোদি সরকারকেও শুনতে হচ্ছে। বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে এই সম্মেলনের রাজনীতিকরণের অভিযোগ বারবার উঠছে। যদিও সরকার তা গ্রাহ্য করছে না; বরং খোদ প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমে নিবন্ধ লিখে বলেছেন, এত কাল যে সম্মেলন নিছক শহরকেন্দ্রিক হয়েছিল, তাঁরা তা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। জি-২০ সম্মেলনকে নগরকেন্দ্রিক না রেখে ছড়িয়ে দিয়েছেন জনগণের মধ্যে। জনগণকে অংশীদার করে তুলেছেন। সেই লক্ষ্যে এই প্রথম এক বছর ধরে এই সম্মেলনের কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে চর্চা হয়েছে ভারতের সব অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে।
খুলনা গেজেট/এইচ/