সাতক্ষীরায় বিরোধপূর্ণ জমিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অফিস তৈরি করায় তুলকালাম কান্ড শুরু হয়েছে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার রাজাপুর গ্রামে এঘটনা ঘটে। এদিকে এই বিরোধপূর্ণ জমি থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অফিস ও পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করার দাবিতে কাফনের কাপড় জড়িয়ে অফিসের সামনে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) অনশন করছে জমির দাবিদার পক্ষ। এই জমির দখল পাল্টা দখল নিয়ে এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার রাজাপুর গ্রামের ইউপি সদস্য মামুন ইকবাল শহিদুলের সঙ্গে একই এলাকার আয়ূব আলীর জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। সম্প্রতি এই জায়গা দখল করে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অফিস নির্মাণ করা হয়েছে। এই অফিসে যাতে কেউ আঘাত করতে না পারে সে জন্য বসানো হয়েছে সি সি ক্যামেরা। ইতিমধ্যে অফিসের ব্যানার ছেড়ার অপরাধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। আর এই অফিসের পাশে বিরোধপূর্ণ জমিতে স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন ইকবাল শহিদুল পাকা ঘর নির্মাণ করছে। ইতিমধ্যে ছাদ পর্যন্ত দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
ইউপি সদস্য মামুন ইকবাল শহিদুল জানান, তিনি পাঁচ দাগে জমি ক্রয় করেছেন। অন্য দাগে আইয়ূব আলী ও তার পরিবারের লোকেরা বসবাস করে। সে কারণে তিনি এই জায়গা দখলে নিয়ে পাকা ঘর নির্মাণ করছে। তিনি আরও বলেন, তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত না। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ এই অফিস তৈরি করেছে।
তবে আইয়ূব আলী জানান, এই জমির প্রকৃত মালিক তারা। মামুন ইকবাল শহিদুল জাল-জালিয়াতি করে এই জমি দখল করছে। তারা জমি ফেরত পেতে টাকা আমানত করেছেন। মামুন ইকবাল শহিদুল সেই টাকা তুলে নিয়েছেন। তবে জমি দখল ছেড়ে না দিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অফিস নির্মাণ করেছেন। অফিসের পাশে বসিয়েছে সিসি ক্যামেরা। সেখানে নির্মাণ করছে বিশাল পাঁকা ঘর। এজন্য আইয়ূব আলী দিনের পর দিন কাফনের কাপড় জড়িয়ে পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে এই ঘরের সামনে অনশন করছে। জমি ফিরত না পাওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু সাঈদ জানান, তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিস তৈরি করার জন্য সরকারি ছয় হাজার টাকা ও দুইবান টিন বরাদ্ধ পেয়েছিলেন। সেই অর্থ দিয়ে এই অফিস নির্মাণ করা হয়েছিল। কে বা কারা তার অফিসের ব্যানার ছিড়ে দিয়েছে। এজন্য তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। আগামি সংসদ নির্বাচনে যাতে এই অফিস থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সে জন্য কতিপয় লোকজন ষড়যন্ত্র করছে।
তবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অপর নেতা শহিদুল মন্ডল বলেন আগে এখানে অফিস ছিল না। বিরোধপূর্ণ জমি দখলকে কেন্দ্র করে এই অফিস তৈরি করা হয়েছে।
আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস জানান, এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। ইউপি সদস্য মামুন ইকবাল শহিদুল সেখানে ঘর নির্মাণ করছে। আর জমির প্রকৃত মালিকরা জমি ফিরে পেতে কাফনের কাপড় পরে অনশন করছে। তিনি বিএনপির রাজনীতি করেন। এজন্য ন্যায্য বিচার করতে গেলে বড় ধরণের গোলযোগ হবে। তবে তিনি উভয় পক্ষকে ত্যাগ স্বীকার করে বিষয়াট মিটিয়ে নিতে বলেছেন। কিন্তু কোন পক্ষই ছাড় দিতে নারাজ।
আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মমিনুল ইসলাম জানান, এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আদালত যাকে রায় দিবে সেই জমি পাবে। তিনি উভয় পক্ষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলেছেন। তবে শীঘ্রই তিনি উভয় পক্ষের কাগজপত্র দেখবেন বলে জানান।
খুলনা গেজেট/ এস আই