শুক্রবার স্বপ্নের মতো একটি দিন কাটায় বাংলাদেশ দল। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনের সকালটা বাদ দিলে গোটা দিন লেখা হয় স্বাগতিকদের নামে। দিন শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৫৩ রান টাইগারদের।
এরপর আলোচনা চললো গোটা রাত, কোথায় ইনিংস ছাড়বেন মমিনুল হক? ৪৫০-৫৫০ রানই যথেষ্ট হবে নিশ্চয়ই। পরিকল্পনা আর প্রয়োগ- বিষয় দুটি মেলানো সহজ কথা নয়। শনিবার সকালেই বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে মাত্র ৩৩০ রানে গুটিয়ে দিল পাকিস্তান।
টেস্ট ক্রিকেটে দিনের প্রথম ঘণ্টা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। সেই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ প্রথম ঘণ্টার চাপ দ্বিতীয় দিনেও কাটিয়ে উঠতে পারল না বাংলাদেশ দল। চট্টগ্রামে প্রথম দিনে শুরুর ঘণ্টায় ৪ উইকেট হারিয়ে বসে টাইগাররা। দিনের বাকি সময় অবশ্য আর বিপদে পড়তে হয়নি।
দ্বিতীয় দিনে যেন প্রথম দিনের ভয়টাই ফিরে ফিরে এল। মেহেদী হাসান মিরাজকে বাদ দিলে সেট দুই ব্যাটসম্যানের সঙ্গে সুবিধা করতে পারেননি বাকিরা। বিবর্ণ সকালে বাকি ৬ উইকেট হারিয়ে আগের রানের সঙ্গে মাত্র ৭৭ রান যোগ করতে পারে।
স্কোর বোর্ডে বড় সংগ্রহ নিয়ে ইনিংস ঘোষণার স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ দল দ্বিতীয় দিনে কুপোকাত পাকিস্তানি পেসার হাসান আলীর কাছে। আগের দিনে ১ উইকেট নেওয়া এই পেসার জানিয়েছিলেন, ৩৫০ রানের মধ্যে অলআউট করতে চান অধিনায়ক মুনিমুল হকের দলকে। সেই হাসানই আজ বল হাতে নেতৃত্ব দিলেন প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে দিতে। আজ ৪ উইকেট নিয়ে ৫ উইকেটের স্বাদ পান তিনি।
অভিষেক সেঞ্চুরি পাওয়া লিটন দাস ১১৩ ও সেঞ্চুরির পথে হাঁটা মুশফিকুর রহিম ৮২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেন। ১৫ মিনিট এগিয়ে সকাল ৯.৪৫টায় শুরু হওয়া ম্যাচের আগে নেট অনুশীলনে লিটন যতগুলো বল খেললেন, ম্যাচে খেলতে পারলেন না তার সিকিভাগ বলও। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে লিটন। হাসান আলীর বলে লেগবিফোরের ফাঁদে পড়ে ফেরেন তিনি। এদিন খেলেন আর মাত্র ৮ বল। ১ রান যোগ করে ১১৪ রানে আউট হন।
দীর্ঘ প্রতিপক্ষার পর অভিষেক ক্যাপ পাওয়া ইয়াসির আলী রাব্বি নিজের সামর্থ্যর প্রমাণ দিতে পারলেন না। বাইশ গজে আত্মবিশ্বাস হারানো বিধ্বস্ত এক যোদ্ধার মতো দেখাল তাকে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫০ এর বেশি গড়ে রান করা এই ব্যাটসম্যান হাসান-আফ্রিদির বলের লাইনই যেন পড়তে পারছিলেন না। ব্যাট-প্যাডের মাঝে বিশাল ফাঁকা স্থান শুরুতেই কাঠগড়ায় তুললো তাকে। এরই খেসারত দিলেন রাব্বি। হাসান আলীর ভেতরে ঢোকা একটি বল স্টাম্প উপড়ে দেয়।
অভিষেক হওয়া রাব্বি ৪ রানে আউট হওয়ার পর দৃষ্টি ছিল মুশফিকের দিকে। তবে আগের দিনের দাপট দেখাতে পারেননি মুশফিক। দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ভুগতে দেখা যায় তাকে। সেঞ্চুরির পথে হাঁটা এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান থামলেন নড়বড়ে নব্বইয়ে। দিনের ১৪তম ওভারে ফাহিম আশরাফের বলের গতি পড়তে পারেননি মুশফিক। বেরিয়ে যাওয়া বল উইকেটরক্ষক রিজওয়ানের হাতে ধরা পড়ার আগে ব্যাটে হালকা চুমু দিয়ে যায়।
৮২ রান নিয়ে দিন শুরু করা মুশফিক ৯১ রানে আউট হলে দলের হাল ধরেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। ২৭৬ রানে ৭ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ ৩০০ ছোঁয় তাদের ২৮ রানের জুটির কল্যাণে। তাইজুল ১১ রান করে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে আউট হলে ভাঙে এই জুটি।
বিবর্ণ সকালে ব্যাট হাতে খানিক দাপট দেখালেন মিরাজ। বলের মান বিচার করে খেলে নিজের পাশাপাশি দলীয় সংগ্রহ বাড়তে থাকেন তিনি। সাবলীল ব্যাটিংয়ে ৬৮ বল খেলে বাউন্ডারি মারেন ৬টি। মিরাজ ৩৮ রান করে আউট হলে আর আগাতে পারেনি বাংলাদেশ দল। গুটিয়ে যায় মাত্র ৩৩০ রানেই।
খুলনা গেজেট/ এস আই