দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনি তফশিল ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু বড় রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থানে অনড় রয়েছে। দৃশ্যমান নির্দেশক অনুযায়ী অবাধ ও অংশগ্রহণ নির্বাচনের সম্ভাবনা সম্পূর্ণ নির্মূল। বিষয়টি উদ্বেগজনক। কারণ এর ফলে অগণতান্ত্রিক শক্তি বিকাশের ঝুঁকি বাড়ছে।
দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিবৃতিতে রোববার (২৬ নভেম্বর) এসব কথা বলেছে।
বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, একদিকে নির্বাচন কমিশন স্বঘোষিত কর্ম-পরিকল্পনা অনুযায়ী দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে পূর্ব-নির্ধারিত ফর্মুলায় ক্ষমতায় যাওয়া বা আঁকড়ে থাকার পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থানে অনড় রাজনৈতিক দল। এ ধরনের সহিংস অস্থিতিশীল রাজনীতিতে হেরে যাচ্ছে দেশের মানুষ। এতে অগণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশের ঝুঁকি বাড়ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ভূমিকা নিশ্চিতে উপযোগী পরিবেশ তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। নিরপেক্ষ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের আস্থা অর্জনে কমিশন কার্যকর পদক্ষেপের উদাহরণ দেখাতে পারেনি। দায়সারা ভাবে আলোচনার আহ্বান জানিয়েই তারা দায়িত্ব শেষ করেছে। নিয়মরক্ষার নামে বাস্তবে প্রতিযোগিতাহীন একতরফা নির্বাচনের এজেন্ডার সহায়ক ভূমিকায় লিপ্ত রয়েছে।
টিআইবি মনে করে, একতরফা নির্বাচন গণতন্ত্র, জনগণের আস্থা এবং ভোটাধিকার নয়। এটি শুধু ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারে। একইভাবে, সহিংসতা গণতান্ত্রিক উদ্দেশ্য অর্জনের পথ হতে পারে না। দেশের মানুষকে জিম্মি করে ক্ষমতার রাজনীতি থেকে সরে আসা উচিত।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গত এক মাসে প্রায় ২০০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে ট্রেনে। গণপরিবহণে আগুন দিয়ে কীভাবে গণতন্ত্র হয় তা আমরা জানি না। আবার এই নাশকতার দায় কার, সেটা নিয়েও পালটাপালটি রাজনীতি হচ্ছে। এ ধরনের কাজ গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য অশনি-সংকেত এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ অকার্যকরের আলামত। এই আত্মঘাতী রাজনীতি থেকে আমরা কবে বেরিয়ে আসতে পারব?’
তিনি বলেন, ‘আমরা সব সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর জবাবদিহি চাই। অন্যদিকে এসব অপরাধের বিচারকে ভিন্নমত ও প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার বানানো হচ্ছে। মৃত মানুষ, প্রবাসীর নামে মামলা হচ্ছে। আর যাদের নামে মামলা হচ্ছে, তাদের না পাওয়া গেলে, পরিবারের সদস্যদের আটক করা হচ্ছে। এর নাম কি ন্যায়বিচার! এই কী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা। মারমুখী রাজনীতি গণতন্ত্রকেই ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘সহিংস রাজনীতিকে উপলক্ষ্য বানিয়ে অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থানের আশঙ্কা অমূলক নয়। রাজনৈতিক দল ও নেতাকর্মী, নির্বাচন কমিশন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনসহ সব অংশীজনকে এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে শান্তি ও সমঝোতার পথ অবলম্বন করতে হবে। সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী, অস্থিতিশীল, সহিংস রাজনীতিতে জনগণের জায়গাটা কোথায়? দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে তাই সব পক্ষকে আমরা আহ্বান জানাই, এবার গণতন্ত্রকে সুযোগ, জনস্বার্থকে প্রাধান্য এবং জনগণকে সুযোগ দিন।
খুলনা গেজেট/কেডি