উপজেলা নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘টোটকা’ খুব একটা কাজে আসছে না। নানা কৌশলের পরও উপজেলা ভোটের প্রথম ধাপের বিভিন্ন পদে অন্তত ২৫ প্রার্থী ভোট ছাড়াই জয়ী হতে যাচ্ছেন। এ ছাড়া মন্ত্রী-এমপির স্বজনকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হলেও বেশির ভাগ প্রার্থী তা কানে তুলছেন না। উল্টো নোয়াখালীর হাতিয়ার চেয়ারম্যান পদে এমপিপুত্র একক প্রার্থী হিসেবে বিনা ভোটে জয়ী হতে চলেছেন। এ উপজেলায় জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী মুশফিকুর রহমানকে আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে ভোট থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে নির্বাচনের প্রথম ধাপের তপশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। এই ধাপে ১৯৮ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৯৫, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৯ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। প্রত্যাহার শেষে চেয়ারম্যান পদে ৫৫৪, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬০৪ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪২৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী টিকে রইলেন। এতে এখন পর্যন্ত এই ধাপে তিন পদে চূড়ান্ত লড়াইয়ে টিকে রইলেন ১৫৮৮ জন। এই ধাপে প্রার্থীদের মধ্যে আজ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ২১ মে এবং ১১২ উপজেলায় ২৯ মে ভোট গ্রহণ করা হবে।
এদিকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া জামায়াতের প্রায় সবাই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেও বিএনপির অন্তত ২০ নেতা চেয়ারম্যান পদে লড়তে মাঠে রয়ে গেছেন। এদের মধ্যে ১৩ জন পদধারী নেতা হলেও বাকি সাতজন বিএনপির সাবেক নেতা। কেন্দ্র থেকে তাদের বহিষ্কারের হুমকি দেওয়ার পরও তারা নাছোড়।
জানা গেছে, নাটোরের সিংড়ায় মনোনয়নপত্র দাখিল করতে গিয়ে অপহরণের শিকার দেলোয়ার হোসেন পাশা একক প্রার্থী হিসেবে বিনা ভোটে জয়ী হতে যাচ্ছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেলই ছিলেন একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী।
গাইবান্ধার সাঘাটায় চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থীর মধ্যে মেহেদী বিদ্যুৎ ও সামশুল আজাদ শীতল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামশীল আরেফিন টিটু বিনা ভোটে জয় নিশ্চিত করেছেন।
হাতিয়ায় চেয়ারম্যান পদে নোয়াখালী-৬ আসনের এমপি মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী, ভাইস চেয়ারম্যান কেফায়েত উল্যাহ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামছু নাহার একক প্রার্থী হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে ‘ডামি’ প্রার্থী আশিক আলীর মা আয়েশা ফেরদাউস এবং জাপা প্রার্থী মুশফিকুর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মুশফিকুরকে আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে ভোট থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, তিনি প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, এমপি মোহাম্মদ আলীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর এমন বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেনীর পরশুরামে চেয়ারম্যান পদে ফিরোজ আহম্মদ মজুমদার, ভাইস চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ সফিকুল হোসেন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সামছুন নাহার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। ফুলগাজীর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মঞ্জুরা আজিজ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতছেন।
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে মো. শওকত আলী দেওয়ান ভাইস চেয়ারম্যান পদে ও মতলব উত্তর উপজেলায় লাভলী চৌধুরী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। লাভলী ওই আসনের এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ভাইপোর স্ত্রী।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হয়েছিলেন আনিছ উজ্জামান। গতকাল প্রত্যাহারের পর ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাজমুল হাসান সোহেল ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাসিনা গাজীও একক প্রার্থী হিসেবে টিকে গেছেন। ফলে এ উপজেলায় আর কোনো ভোটের প্রয়োজন নেই। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ। তিনি জানান, চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী ছিলেন আনিছ উজ্জামান। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দু’জন করে প্রার্থী থাকলেও ওই পদগুলোতে একজন করে প্রার্থী নিজেদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নির্দেশ না মেনে লড়াইয়ে বিএনপির ২০ নেতা
গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে কেউ কেউ প্রত্যাহার করলেও বিএনপির ২০ জন চূড়ান্ত লড়াইয়ে রয়ে গেছেন। এদের মধ্যে ১৩ জন দলের পদে থাকলেও অন্যরা পদহীন। সিলেটে বিএনপির পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে কেউই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। তারা হলেন– বিশ্বনাথ পৌর বিএনপির সদস্য, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গৌছ খান, একই উপজেলায় যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপি নেতা সেবুল মিয়া ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী, সুনামগঞ্জের শাল্লা বিএনপি সভাপতি গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার এবং দিরাই উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাপ মিয়া।
এ ছাড়া পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ২ নম্বর সদস্য ফায়জুল কবীর তালুকদার, ফরিদপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী কোতোয়ালি (ফরিদপুর সদর) বিএনপির সাবেক সভাপতি রউফ উন নবী, চরভদ্রাসনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন মৃধা, নাটোর সদরে চেয়ারম্যান পদে এনএস কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ হিরা লড়াইয়ে রয়েছেন। তবে তিনি দলের কেউ নন বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও বিএনপি নেতা আবু হাসনাত তারেক ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন। ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য শামসুর রশিদ মজনু রয়ে গেছেন ভোটের মাঠে। ফুলপুরে চেয়ারম্যান পদে পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমরান হাসান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান তুষার, নীলফামারীর ডিমলায় বিএনপি সমর্থক মুক্তারুল হক মুকুল, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সারোয়ার হোসেন, কুমিল্লার মেঘনায় উপজেলা বিএনপি সভাপতি রমিজ উদ্দিন, রাঙামাটির কাউখালীতে উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা মংসুইউ চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ওমরাও খান প্রার্থী হিসেবে থাকছেন।
খুলনা গেজেট/এইচ