বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় রাত দিন জুড়ে দফায় দফায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে স্বাভাবিক জনজীবনে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে নামাজে দাঁড়ালেই বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়াটা এক রকম নিয়মেই পরিণত হয়েছে। নামাজের সময় বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়ায় মুসল্লিরা গরমে নামাজ পড়তে বিড়ম্বনা পোহাচ্ছেন। মসজিদ থেকে বের হয়ে মুসল্লিদের কেউ কেউ নানা মন্তব্য করছেন। বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হলেও কোন সুরাহা হয়নি।
উপজলার ১০ ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, কর্মজীবিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে বেশ কিছুদিন ধরে এ উপজলার সর্বত্রই ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়াটা এখন নিয়মিত রুটিনে পরিনত হয়েছে। দিন রাত সমান তালে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে দেড় /দুই ঘণ্টার আগে দেখা মিলছেনা। কোন কোন সময় সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে কয়েক ঘণ্টা কেটে যায়। ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হিমায়িত মাছ ব্যবসায়ী, স্বাস্ব্য সেবা কেন্দ্র, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার ফয়লাহাট, ভাগা, গৌরম্ভা, ঝনঝনিয়া, বাবুরবাড়ি, গিলাতলা, পেড়িখালি সহ বিভিন্ন এলাকায় হিমায়িত চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরণের মাছ বেচাকেনা হয়ে থাকে। বিদ্যুতের লোড সেডিংয়ের কারণে বরফ উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। আর এ কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি স্বাস্ব্য সেবা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে সব আদান প্রদান করা যাচ্ছেনা। বিভিন্ন হাট বাজারে গুরুত্বপুর্ণ স্থানের দোকান, হোটল রেস্টুরেন্ট, রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষন করা খাদ্য পণ্য, বিভিন্ন কোম্পানির জীবনদায়ী ঔষধ, কোমল পানীয় ও আইসক্রিম দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় সংরক্ষন করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
ফয়লাহাট ও তার আশ পাশের কয়েকটি এলাকায় গভীর নলকুপ থেকে পাইপ লাইনের সাহায্য মোংলা বন্দর, ইপিজেডসহ বিভিন্ন এলাকায় খাবার পানি সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সরবরাহ মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে। সামনে এসএসসি পরীক্ষা। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পরীক্ষার্থীদের পড়াশুনা ব্যাহত হচ্ছে। কুরবানি সামনে রেখে সাধারণ ব্যসায়ীরা বেচা কেনা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তারা বিপাকে পড়ছেন।
একজন ফার্মেসী মালিক বলেন, কিছু কিছু ঔষধ ফ্রিজে রাখতে হয়। দীর্ঘক্ষণ বিদুৎ না থাকলে ওই সব ঔষধের গুনাগুন ভালো নাও থাকতে পারে। কখনও মাগরিব, কখনও এশা, কখনও জোহর এমনকি জুম্মার নামাজের আগেও বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়ায় মুসল্লিরা ক্ষুদ্ধ হচ্ছেন।
মুসল্লিরা বলেন, গরমে বিদ্যুৎ না থাকলে নামাজ পড়তে কষ্ট হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সমালোচনা করে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। সেখানে এত ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কোন কারণ তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর রামপাল পল্লী বিদ্যূতের জরুরী সেবার মোবাইল ফোনে কয়েক বার কল করার পর ভাগ্যক্রম কল রিসিভ করলে বলা হয় এখন লোড সেডিং চলছে। দেড়/ দুই ঘণ্টা পরে পাবেন।
বিদ্যুতের কি পরিমাণ ঘাটতি রয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা বলেন, রামপালে গ্রাহক অনুপাতে দিনের বেলায় ৫.২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতর চাহিদা রয়েছে। আর রাতে চাহিদা রয়েছে ৭.৪ মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকায় বাধ্য হয়ে রাতে লোড সেডিং করতে হয়।