বিএনপির ঘোষিত ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা’কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। আগামীদিনে তা বাস্তবায়নে এক সঙ্গে কাজ করার জন্য আশাবাদ বক্ত্য করেন তারা। এছাড়া এ বিষয়ে জনমত তৈরিতে সভা-সেমিনারের মাধ্যমে বিশদ আলোচনার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন কেউ কেউ। বিএনপির ২৭টি রূপরেখা প্রসঙ্গে মতামত দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এর আগে আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপির পক্ষ থেকে এ রূপরেখা তুলে ধরা হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২৭টি রূপরেখার বিস্তারিত তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এসময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতা, পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের যে রূপরেখা বিএনপি উপস্থাপন করেছে, এটা আরও আগে ঘোষণা করা উচিত ছিল। তারপরও আমি খুবই আগ্রহী। দেশবাসীর জন্য খুব সুন্দর সুন্দর কথা লেখা হয়েছে। এক কথায় চমৎকার ও সময়োপযোগী।’
রেজা কিবরিয়া আরও বলেন, ‘বিএনপির এই রূপরেখা বাস্তবায়নে ও মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বেশি করে সেমিনার করতে হবে। আইনের শাসন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এই রূপরেখা কাজে দেবে। এটা নিয়ে কথা বলতে আমি আগ্রহী আছি, আমাকে ডাকলে আসব।’
বিএনপির ১০ দফা ও রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা নিয়ে আওয়ামী লীগ মাথা ঘামাচ্ছে না জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যাদের হাতে ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর ও ২১ আগস্টের রক্তের দাগ, তারা কোনোভাবেই রাষ্ট্র মেরামত করতে পারবে না। বিএনপি আজ (সোমবার) রাষ্ট্র মেরামতের যে রূপরেখা দিয়েছে, তাতে কোনো লাভ হবে না।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মুক্তি দিতে যারা আমাদের সংবিধান সংশোধন করেছে। পাঁচবার যারা দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে, তারা করবে রাষ্ট্র মেরামত? যারা আমাদের দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, যারা দণ্ডিত হয়েছে-তারা করবে রাষ্ট্র মেরামত?’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে রাষ্ট্রকে মেরামত করার জোট হয়েছে। গতবার ২৩ দল ছিল, এবার ৩৩ দল হয়েছে। বাংলাদেশে জোটের অভাব নেই। এখানে বাম-ডান সব এক হয়ে গেছে। এখানে প্রগতি আর নেই। প্রগতিশীল আর প্রতিক্রিয়াশীল এক হয়ে গেছে, তাদের লক্ষ্য শেখ হাসিনাকে হঠাও। রাষ্ট্রকে মেরামত আমরাই করেছি। আমরাই করবো।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশের মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরে আসবে না। আমি এখনও বিএনপি প্রস্তাবটা দেখিনি। হয়তো দেখব। তারপর মন্তব্য করতে পারব।’
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘ভালো প্রস্তাবনা। আমরাও উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের আইন সভা চাই। এটা বাস্তবায়ন করবে কে? এমন একটা সংসদ থাকলে দেশের মানুষের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশবাসীর যে প্রত্যাশা ছিল, এই রূপরেখা তা পূরণ করবে। খুব অচিরেই মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফল ঘটবে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘এই কর্মসূচি বিএনপি তুলে ধরেছে তা জাতির সমস্যা ও সংকটের সমাধান করবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মত গ্রহণ করা হবে। এটা জনগণের জন্য সর্বজনীন রূপরেখা। আমরা যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তা বাস্তবায়নের দিকে যাব।’
গণসংগহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘রাষ্ট্র কাঠামোকে সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাখতে হবে। যে প্রস্তাবনা আসছে এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। আমাদেরও কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা রয়েছে। সব কিছু মিলে আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিস্তারিত আলোচনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাব।’
২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বলেন, ‘আমরা (কল্যাণ পার্টি) ১৫ বছর আগে পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। দেরিতে হলেও আজকে তার যাত্রা শুরু হয়েছে। ২৭টি রূপরেখা চাইলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। যাত্রা শুরু হয়েছে। এটাকে ইতিবাচক দেখছি।’
২০ দলীয় জোট শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের শওকত আমিন বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার করেই বর্তমান সংকট নিরসন করতে হবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন আইন সংস্কার করতে হবে। একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন পেতে হলে যে সব শর্ত দেওয়া আছে, তা পূরণ করা কঠিন। তাই বিএনপি ২৭টি রূপরেখায় ইসি আইন সংস্কারের প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করতে হবে।’
আরেক শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিএনপির এই রূপরেখা জাতির জন্য সময়োপযোগী ঘোষণা।’
জাগপার ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করব। আশা করি দেশবাসীর জন্য একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উপহার দিতে পারব।’