খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী : রায় কবে জানা যাবে আজ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

বিএনপিপন্থী হওয়ায় ১০ বছরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার

ইবি প্রতিনিধি

২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভাড়ায় চালিত গাড়ি চাপায় নিহত হন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান টিটু। তার মৃত্যুর পর তৎকালীন প্রশাসন তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে থেকে একজনকে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি এবং তার নামে একটি ভবনের নামকরণের আশ্বাস দেন। কিন্তু তার পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় তৎকালীন প্রশাসন কোনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি বরং হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। এছাড়া এই ঘটনার দীর্ঘ দশ বছর পার হলেও কোনো ক্ষতিপূরণ ও বিচার পাননি তারা। ফলে এখনো মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে টিটুর পরিবারকে।

মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির প্রেস কর্ণারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান টিটুর ছোট ভাই তারেক আজিজ। এসময় তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে টিটুর পরিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তিনটি দাবি উপস্থাপন করেন। তাদের দাবিগুলো হলো- অনতিবিলম্বে টিটুর বোনের চাকরি স্থায়ীকরণ করা, তার স্মৃতি রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভবনের নামকরণ করা এবং তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে টিটুর পরিবার জানান, এই দশ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও টিটুর পারিবারিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। টিটুর বাবা আব্দুল আজিজ পেশায় একজন কৃষক। বর্তমানে ওপেন হার্ট সার্জারি করার পর এখন তিনি কর্মক্ষমতা হারিয়েছে ফেলেছেন। তার ছোট ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত। তাই তার বাবার নিজের চিকিৎসার খরচই যেখানে জোগাতে পারছেন না সেখানে পরিবার এবং সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াতো তাঁর জন্য দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই বর্তমানে পরিবারটির হাল ধরার মতো কেউ নেই। বিগত দশ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে বার বার দেখা করলে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি।

এদিকে ২০১৬ সালে তার বোন আফরোজা আক্তার লাকি কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে থোক বরাদ্দে (চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী চাকুরী) নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু যোগদানের আট বছর পার হলেও চাকুরি স্থায়ী করা হয়নি। এছাড়া অভিযুক্ত ড্রাইভার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের।

টিটুর বাবা আব্দুল আজিজ বলেন, আমার অনেক আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু আমার ছেলের মৃত্যুর ১০ বছর পার হলেও কোন ক্ষতিপূরণ পাইনি। আমার পরিবারের একজনকে চাকুরি দেওয়ার কথা হলেও এখন পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করুক।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে টিটু শিক্ষার্থীবাহী ভাড়ায় চালিত ঝিনাইদহগামী বাসে উঠার চেষ্টা করে। এসময় বাস চালক হঠাৎ দ্রুত চালালে সে বাসে উঠতে ব্যর্থ হয়ে রোডে পরে যান। এ সময় পেছন থেকে ভাড়ায় চালিত অপর একটি বাস (সাগর পরিবহন) দ্রুতবেগে তার গলার উপর দিয়ে চলে যায়। এতে গলা ছিঁড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন টিটু। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসসহ প্রায় ৪০টি বাস পুড়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। এতে ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় চার মাস বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়।

গাড়ি পোড়ানোর ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০০ জনকে আসামি করা হয়। তবে ঘাতক ড্রাইভার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানান নিহতের পরিবার।

এই বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তারা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আমার কাছে আসুক। আমি সকলের কথা শুনবো সকলের অধিকার নিয়েই কাজ করবো।’

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!