বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) মালিকানাধীন মাওয়া ও আরিচা ঘাটের ফেরিতে লাগানোর জন্য ফগলাইট কেনায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান চার কর্মকর্তাসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামালা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা ১-এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় মিথ্যা প্রত্যয়নপত্র ও তথ্য যাচাই না করে জনি করপোরেশনের দরপত্রকে ‘রেসপনসিভ’ দেখিয়ে ফগলাইট সরবরাহ আদেশ প্রদান ও গ্রহণ করে অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামিরা হলেন, বিআইডব্লিউটিসির সাবেক জিএম ক্যাপ্টেন শওকত সরদার (৬০), সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক (কারিগরি) ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল, মহাব্যবস্থাপক নুরুল হুদা ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-সচিব পঙ্কজ কুমার পাল। এ ছাড়া এই মামলায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) সাবেক মহাব্যবস্থাপক (মেকানিক্যাল) রহমত উল্লা (৬৩), বাংলাদেশ জুটমিল করপোরেশনের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (মেকানিক্যাল) নাসির উদ্দিন ও মেসার্স জনি করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী অবসরপ্রাপ্ত লে. কমান্ডার ওমর আলীকেও এই আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, মেসার্স জনি করপোরেশন মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফগলাইট সরবরাহ করতে বিআইডব্লিউটিসিতে দরপত্র জমা দিয়েছিল। কিন্তু আসামিরা দরপত্র যাচাই না করেই জনি করপোরেশনের কাছে ১০টি ফগলাইট সরবরাহের আদেশ দেন। সরবরাহকৃত লাইটগুলো ছিল নিম্নমানের। এগুলো আরিচার খান জাহান আলী ফেরি, ফেরি জাহাঙ্গীর, ফেরি এনায়েতপুরী, ফেরি কপোতী, ফেরি কুমারী এবং মাওয়া ঘাটের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন ফেরি, আমানত শাহ ফেরি, শাহ আলী ফেরি, কাকলী ফেরি ও ক্যামেলিয়া ফেরিতে স্থাপন করা হয়।
এসব লাইটে ঘন কুয়াশার সময় বিশ গজ দূরত্বেও কিছু দেখা যেতো না। নিম্নমানের লাইট কেনায় পুরো প্রকল্প ব্যর্থ বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিআইডব্লিউটিসি যে ১০টি ফগলাইট কিনতে দরপত্র আহ্বান করেছিল, তার বিপরীতে সরবরাহকৃত লাইটগুলো ছিল মূলত সার্চলাইট। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জাহাজে সাত হাজার কিলোওয়াটের এসব লাইট ব্যবহার হতো। ঘন কুয়াশায় এসব লাইট দিয়ে সামনের কিছু দেখার উপায় নেই। এগুলো এলইডির মতোই সাদা আলো ছড়ায়।
এ ছাড়া প্রতিটি লাইটে সার্চলাইট শব্দটি লেখা থাকলেও সেগুলো ফগলাইট হিসেবেই গ্রহণ করা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা পরস্পরের যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের জন্য সার্চলাইট জেনেও এগুলো কিনেছেন। দরপত্রে দেখানো দামের চেয়ে অনেক কম দামে এসব লাইট কেনা হয়েছে। জনি করপোরেশনের মাধ্যমে এসব অর্থ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন আসামিরা।