বাড়ির আঙিনায় বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে সাড়া জাগিয়েছেন বাপ্পী ও মিঠুন নামে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুর দুই যুবক। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে ইন্টারনেটের কল্যাণে ইউটিউব দেখে নতুন এ পদ্ধতির মাছ চাষে ঝুঁকেছেন উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের দুই বন্ধু।
তাঁরা বাড়ির পাশে পতিত জমিতে শুরু করেছেন নতুন পদ্ধতির এ মাছ চাষ। প্রথমে দশ হাজার লিটারের একটি ব্লকে মাছ চাষ শুরু করলেও বর্তমানে তাঁর পরিধি বাড়িয়ে আরও তিনটি দশ হাজার লিটারের ব্লকে করছেন বায়োফ্লক পদ্ধতির মাছ চাষ। এতে তাদের মধ্যে আঁশার সঞ্চার হয়েছে। বাড়ির আঙিনায় অল্প খরচে নতুন পদ্ধতির এ মাছ চাষ দেখে প্রথমে এলাকার অনেকে হাঁসি-তামাশা করলেও এখন তাদের দেখে অনেকেই নতুন পদ্ধতির এ মাছ চাষে পরামর্শ নিতে ছুঁটে আসছেন তাদের কাছে। তাঁরা এখন নতুন পদ্ধতির মাছ চাষের মডেল ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বাপ্পী ওই গ্রামের অমল সাহার ছেলে ও মিঠুন একই গ্রামের মনোজ কুমারের ছেলে। নতুন পদ্ধতির এই মাছ উপজেলায় প্রথম বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে, নতুন পদ্ধতির এই মাছ চাষ দেখতে গিয়ে কথা হয় বাপ্পী ও মিঠুনের সাথে। তাঁরা আজকালের খবর প্রতিবেদককে জানান, প্রথমে ইউটিউবে দেখে বাড়ির আঙিনায় বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের সিদ্ধান্ত নেন। নিজেদের পুকুর তৈরির তেমন কোন জায়গা না থাকায় নতুন এই পদ্ধতির মাছ চাষে আগ্রহী হন। স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দুই মাস আগে শুরু করেন ট্যাঙ্ক তৈরির কাজ। চারিদিকে বালুর বস্তা, সিমেন্টের খুঁটি, ত্রিপল, নেট ও ওপরে রঙিন পলিথিনের চালা দিয়ে তৈরি করেন ট্যাঙ্ক বা খাঁচা, আর সীমানা প্রাচীর তৈরী করেন বাঁশের খুঁটি ও ঢেউটিন দিয়ে। এভাবে প্রতিটি দশহাজার লিটারের চারটি ব্লক তৈরি করে শুরু করেন মাছ চাষ। এর আগে মাছ চাষের উপযোগি করতে এসব খাঁচায় চুন, লবণ, চিটাগুড় ছিটিয়ে পানির কালচার (মিশ্রণ) করেন। এভাবে সাতদিন রাখার পর তাতে ছাড়া হয় মাছের পোনা। প্রথমে তাঁরা একটি ব্লকে তিন হাজার দেশিও প্রজাতির শিং ও মাগুর মাছের পোনা ছাড়লেও প্রশিক্ষণ বা ধারনা না থাকায় প্রথমে তাঁরা সফলতা পাননি। ওই পোনামাছগুলোর মধ্যে প্রায় দুই হাজার পোনা মারা যায়, বাকি পোনাগুলো তুলে অন্যের পুকুরে ছেড়ে দেন। তাতে নিরাশ হননি বা থেমে থাকেননি অদম্য দুই বন্ধু। যোগাযোগ করেন স্থানিয় মৎস্য ও কৃষি দপ্তরের সাথে পরামর্শের জন্য। কিন্তু তারাও তাদের কোন পরামর্শ বা প্রশিক্ষণ দিতে পারেননি। পরে ইউটিউব থেকে আবারও ধারণা নিয়ে শুরু করেন মাছ চাষ। এতে তাদের প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
এবিষয়ে বাপ্পী জানান, তাঁরা প্রতিটি ব্লকে প্রায় চার হাজার দেশিয় প্রজাতির তেলাপিয়া ও কৈ মাছের পোনা ছেড়েছেন। মাছগুলো এখন বড় হতে শুরু করেছে। আগামি এক দেড় মাসের মধ্যে বানিজ্যিকভাবে এসব মাসের বিক্রি শুরু করতে পারবেন। এতে তাঁরা লাভবান হবেন বলেও আশা করছেন। বাপ্পী আরও বলেন, যদি স্থানিয় মৎস্য বা কৃষি দপ্তর থেকে তাঁরা এ ব্যাপারে পরামর্শ বা প্রশিক্ষণ পেতেন তাহলে তাদের ব্যয় আরও কম হতো। তাদের দেখে স্থানিয় আরও অনেক যুবক ছুঁটে আসছেন পরামর্শ নিতে। আগ্রহ প্রকাশ করছে এ পদ্ধতির মাছ চাষ করার। তিনি বায়োফ্লক পদ্ধতির এ মাছ চাষের বিষয়ে স্থানিয় মৎস্য ও কৃষি দপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের দাবি জানিয়ে বলেন, তাহলে অনেক যুবকই স্বল্প ব্যয়ে এ পদ্ধতির মাছ চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বি হতে পারবে।
এবিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা উপানন্দ কুমার বৈদ্য বলেন, ওই দুই যুবক আমাদের কাছে এসেছিলেন। কিন্ত আমাদের এ বিষয়ে কোন ধারণা না থাকায় তাদের কোন পরামর্শ দিতে পারি নাই। তিনি আরও বলেন, আমরা এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি। তাঁরা আমাদের জানিয়েছেন নতুন পদ্ধতির এ মাছ চাষ নিয়ে এখনও গবেষনা চলছে তাই এ ব্যাপারে কোন পরামর্শ বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। তবে তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজ হাসান বলেন, বিষয়টি আমি জেনে আমার দুইজন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। নতুন পদ্ধতির মাছ চাষে সত্যিই ওই যুবক সাড়া জাগিয়েছেন। এবিষয়ে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন আমাদের কর্মকর্তারা। নতুন পদ্ধতির মাছ চাষের মডেল ওই দুই উদ্যোক্তাকে কৃষি দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/কেএম