খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  এনবিআরের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার
  গেল ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আরও ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৮৩
  এনবিআরে তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে ফেরার আহবান, অন্যথায় ব্যবস্থা : প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

বারোআড়িয়া যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিষ চন্দ্র মন্ডল ও মোল্লা আব্দুল আজিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বটিয়াঘাটা উপজেলার সুন্দরমহল গ্রামের সন্তান জ্যোতিষ চন্দ্র মন্ডল। সন্তোষ কুমার মন্ডল তার পিতা আর ললিত বালা মন্ডল তার মা। ১৩৫৫ সালের ১৫ জৈষ্ঠ্য তার জন্ম। মুক্তিদ্ধের প্রাক্কালে খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন। শহরের বাগমারায় লজিং থেকে পড়াশুনা করতেন। তিনি ছাত্রলীগের নীতি আদর্শে বিশ্বাসী।

১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দালন শুরু হলে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মার্চ মাসেই বোমা তৈরির কাজে অংশ নেয়। খুলনা জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান শেখ কামরুজ্জামান টুকুর পরামর্শে বোমা তৈরিতে পারদর্শী হয়। ২৫ মার্চের আগে ছাত্রলীগ নেতা বিনয় সরকার, বাগমারার তপন কুমার বিশ্বাসী ও জ্যোতিষ মন্ডল রাত আনুমানিক ৮টার দিকে খুলনা এসপি অফিসে বোমা চার্জ করে। মুহূর্তের মধ্যে তাদেরকে সেখান থেকে পালাতে হয়। ২৭ মার্চ এ তিনজন সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে রওনা হয় (মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধ গবেষণা ফাউন্ডেশন, খুলনার প্রকাশনা ‘রক্তে রক্তে স্বাধীনতা)। তিনজনই হাজির হয় বশিরহাট ক্যাম্পে। সেখান থেকে ৪০ দিনের প্রশিক্ষণের জন্য জ্যোতিষ চন্দ্র মন্ডলকে পাঠানো হয় দেরাদুন মিলিটারী একাডেমিতে। সেখানে তিনি ওয়্যারলেস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

একপর্যায়ে মুজিববাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার তোফায়েল আহমেদের ওয়্যারলেস অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেয়ার প্রত্যয় নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে পাইকগাছা থানার পাতড়াবুনিয়ায় মুজিব বাহিনীর ক্যাম্পে যোগ দেন। এদিকে খবর আসে বটিয়াঘাটার বারোআড়িয়া বাজারে মনি গোলদারের বাড়িতে রাজাকাররা ক্যাম্প গড়ে তোলে সেখানে লুটপাট ও নির্যাতন চালাচ্ছে। বৃহত্তর খুলনা মুজিববাহিনীর প্রধান শেখ কামরুজ্জামান টুকু মুক্তিযোদ্ধা ১২-১৫ জনের একটি দলকে বারোআড়িয়া ক্যাম্প দখলের পরামর্শ দেন। এ যুদ্ধে অধিনায়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন খুলনা জেলা ছাত্রলীগের কোষাধ্যক্ষ বটিয়াঘাটার চক্রাখালী গ্রামের বিনয় সরকার। উপ-অধিনায়ক ছিলেন পাইকগাছার চাঁদখালী ইউনিয়নের মৌখালী গ্রামের আব্দুল আজিজ মোল্লা।

নৌকায় করে গভীর রাতে বারোআড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাস্তার কাছে মুক্তিবাহিনীর এ দলটি পৌঁছায়। রাতেই তারা ক্যাম্প দখল করে। রাজাকার ক্যাম্পের গায়ে বিস্ফোরক দ্রব্য স্থাপনে মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের পরিচয় দেয়। বিস্ফোরণ ঘটলে রাজাকাররা এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধারা একপর্যায়ে ছত্রভঙ্গ হলেও পরবর্তীতে সংগঠিত হয়। দিনটি ২৯ নভেম্বর। ভোর থেকে রাজাকারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে উপ-অধিনায়ক আব্দুল আজিজ মোল্লা গুলিবিদ্ধ হয়। চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান। ভোরের আলোয় রাজাকারদের গুলিতে লুটিয়ে পরে জ্যোতিষ চন্দ্র মন্ডল।

যুদ্ধের অধিনায়ক বিনয় জ্যোতিষ মন্ডলকে নিরাপদ স্থানে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ দুই বীর যোদ্ধার লাশ বেতোডাঙ্গা মুজিববাহিনীর ক্যাম্পে আনা হয়। আজিজ মোল্লার লাশ দাফনের জন্য চাঁদখালী ইউনিয়নের মৌখালী গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে পাঠানো হয়। জ্যোতিষ মন্ডলের লাশের সৎকার হয় যুদ্ধক্ষেত্রের পাশর্^বর্তী পাতলাবুনিয়া ইসকন মন্দির প্রাঙ্গণে। বটিয়াঘাটা-বারোআড়িয়া রাস্তার নামকরণ করা হয় বারোআড়িয়া যুদ্ধে দুই বীর শহীদ আব্দুল আজিজ ও জ্যোতিষ মন্ডলের নামানুসারে।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!