খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

‘বাবাকে ফিরে পেতে আর কত বছর লাগবে?’

গেজেট ডেস্ক

মিরপুর এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেন নিখোঁজ হন ২০১৯ সালের জুনে। তাঁর মেয়ে আনিসা ইসলাম বলেন, ‘বাবাকে ফিরে পেতে আর কত বছর লাগবে জানি না। আদৌ ফিরে পাব কি না, সেটাও বলতে পারছি না। বাবা বেঁচে আছেন কি না, এটাও আমরা বলতে পারছি না। আমি জানতে চাই, আমার বাবা বেঁচে আছেন কি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই অনুরোধ, তিনি যেন আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন।’

শুধু বাতেনের মেয়ে আনিসা ইসলাম নন, এমন প্রশ্ন গুমের শিকার প্রত্যেক মানুষের স্বজনদের। বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে ‘মায়ের ডাক’শিরোনামে আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে। তাঁদের একটাই আকুতি। তাঁরা স্বজনদের ফিরে পেতে চান। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া প্রত্যেকের বুকে নিখোঁজ স্বজনের ছবি। কারও বুকে সন্তানের ছবি, কারও বুকে বাবার ছবি, আবার কারও বুকে ভাইয়ের ছবি। সভায় নিজেদের দুঃসহ কষ্টের কথা তুলে ধরেন তাঁরা। কারও মা, কারও সন্তান, কারও বোন ঘটনার বর্ণনা দেন। তাঁরা প্রতিটি ঘটনাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ করেন।

আনিসা বলেন, ‘বাবা যখন নিখোঁজ হন, আমার ছোট ভাই মো. ইনামের বয়স তখন মাত্র আড়াই বছর। এখন তার বয়স পাঁচ বছর ছুঁই ছুঁই। সে আমাকে যখন প্রশ্ন করে বাবা কোথায়, আমি নির্বাক হয়ে যাই। চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। যখন বাইরের লোকজন জিজ্ঞাসা করে, তোমার বাবা কী করেন, তিনি কোথায়, তখন আমরা জবাব দিতে পারি না। যদি বলি, বাবা গুম হয়ে গেছেন, তবে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, বাবা বড় অপরাধী না হলে গুম হতেন না। কিন্তু আমরা তো জানি না আমার বাবার কী অপরাধ? অপরাধ করলে তাঁর বিচার হোক, গুম করে জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে পারেন না। বাবার সন্ধান চাই।’

তিতুমীর কলেজের ফাইন্যান্স বিভাগের ছাত্র আবদুল কাদের মাসুম নিখোঁজ হওয়ার পরে আট বছর পেরিয়ে গেছে। তাঁর মা আয়েশা আলী এখনো প্রতীক্ষায় আছেন। একমাত্র ছেলে ফিরে আসবেন মায়ের কোলে। মা বলে জড়িয়ে ধরবেন। কিন্তু সেই প্রতীক্ষা যেন আর শেষ হয় না। মাসুমের মায়ের প্রশ্ন—তবে কি এই প্রতীক্ষার অবসান কখনোই হবে না, ছেলে কি ফিরবে না?

মাসুমের মা আয়েশা আলী গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে টিউশনির কথা বলে ঢাকার নাখালপাড়ার বাসা থেকে বের হন ছেলে আবদুল কাদের মাসুম। তখন বয়স ছিল ২৪ বছর। আমার একটাই ছেলে। খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল সে। আশা ছিল প্রশাসনে বড় চাকরি করে দেশের মানুষের সেবা করবে। কোন অপরাধে তাকে গুম করে দেওয়া হলো, সেটা আমরা জানি না। আমাদের একটাই অনুরোধ, আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন। ছেলে ফিরে আসবে এই প্রতীক্ষায় থাকি প্রতিনিয়ত। ছেলে ফিরে আসে না। এটা যে কত দুঃসহ যন্ত্রণার, এটা বলে বোঝানো সম্ভব না।’

২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর সাজেদুল ইসলামসহ আটজন ঢাকার শাহীনবাগ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। সাজেদুল ইসলামের মেয়ে হাফসা ইসলাম বলেন, ‘আমি আট বছর ধরে এখানে দাঁড়িয়ে একই কথা বলছি। আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। আমি গত বছর বলেছিলাম, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিতে না পারলে আমাকেও গুম করে দিন। আমি আজও একই কথা বলছি। আমি এখানে আর আসতে চাই না। আমি শুধু আমার বাবাকে ফিরে পেতে চাই। হাফসা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি কি আমাদের কান্না শুনতে পাচ্ছেন না, স্বজন হারানোর ব্যথা কি অনুভব করতে পারছেন না?’

সভায় নিখোঁজদের পরিবারকে সহমর্মিতা জানাতে এসেছিলেন মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তাঁরা গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার তাগিদ দেন। পাশাপাশি বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম প্রমুখ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘একটা প্রশ্ন মনের মধ্যে আসে, গুম কারা করে। এই গুম সরকারি বাহিনী করেছে, সরকার করেছে—এটা বিশ্বাস করার বহু কারণ রয়েছে। যদি গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সরকারি বাহিনী না করে থাকে, তাহলে যাঁরা গুম হয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করছেন না কেন। কেউ কেউ তো গুম হয়েছেন ১০–১২ বছর হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, কেন খুঁজে বের করা হচ্ছে না নিখোঁজ ব্যক্তিরা কোথায়। কারা জড়িত, তাঁদের বের করা হচ্ছে না। এমনকি এ ব্যাপারে মামলা করতে গেলে সেটা গ্রহণ করতে চান না। নিজেরা না করে থাকলে মামলা গ্রহণ করার কথা। যখন আপনি নিজে করবেন, তখন মামলা নিতে চাইবেন না।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!