খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
  নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে টেক্সটাইল মিলে গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দুজনের মৃত্যু

বাজারে উঠতে শুরু করেছে সাতক্ষীরার সুস্বাদু আম

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

বাজারে উঠতে শুরু করেছে সাতক্ষীরার সুস্বাদু আম। জেলার আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ি প্রথম পর্যায়ে সোমবার (৫ মে) থেকে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও দেশীয় বৈশাখী আমসহ স্থানীয় জাতের আম। আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের কারণে এখানকার আম দেশের অন্য এলাকার তুলনায় অগ্রিম পরিপক্ব হয়। ফলে আগে বাজারে ওঠার কারণে বেশি দামে বিক্রিও হয় সাতক্ষীরার এই আম। পর্যায়ক্রমে আগামী ২০ মে হিমসাগর, ২৭ মে ন্যাংড়া এবং ৫ জুন থেকে আম্রপালি আম বাজারে পাওয়া যাবে।

সোমবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি এলাকার জনৈক বেলাল এর গাছ থেকে আম পেড়ে জেলায় আম সংগ্রহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। এসময় জেলার আম চাষী ও ব্যবসায়িরা উপস্থিত ছিলেন।

সাতক্ষীরার সুস্বাদু গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি জাতের আমের কদর আছে দেশ বিদেশে। জেলার আবহাওয়া ও মাটি এই অঞ্চলের আমকে করেছে সুস্বাদু, ঘ্রাণযুক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী। যা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। কাজেই সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আম শুধু বাংলাদেশের বাজারে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও বেশ জনপ্রিয়। যে কারণে প্রতি মৌসুমে দেশের গোন্ডি পেরিয়ে ২০১৫ সাল থেকেই আমেরিকা ও ইউরোপে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে সাতক্ষীরার আম। যা জেলার অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলায় ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫ হাজার আম বাগান রয়েছে। চলতি বছর এখান থেকে ৬২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি বিভাগ। যার মধ্যে প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।

সদর উপজেলার ধুলিহর এলাকার আম চাষী মোকলেছুর রহমান জানান, আমার ১৪/১৫টি বিভিন্ন জাতের আমের বাগান রয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই অনাবৃষ্টির কারণে অনেক আম ঝড়ে পড়েছে। গাছে যা আম আছে তাতে সামনে যদি কোন প্রাকুতিক দুর্যোগ না আসে তাহলে মোটামুটি ভাল ব্যবসা হবে।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের সুচি মেনেই আমরা ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, গোলাপখাস ও বোম্বাইসহ স্থানীয় জাতের আম পাড়া শুরু করেছি। সকাল থেকে প্রায় ৮০ ক্যারেট বিভিন্ন জাতের আম পেড়ে বাজারে পাঠিয়েছি। মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়ার কারণে সাতক্ষীরার আম তাড়াতাড়ি পেকে যায় এবং আম খুব সুন্দর সুস্বাদু হয়। আগে পাকায় আমরা সবার আগে বাজারজাত করতে পারি। আগে বাজারজাত করায় দামও ভাল পাই।

শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের আম ব্যবসায়ি ফজর আলী খোকা বলেন, সোমবার সকাল থেকে বাজারে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, গোলাপখাস ও বোম্বাইসহ স্থানীয় জাতের আম আসা শুরু করেছে। এবার আমের কোয়ালিটি বেশ ভাল। গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম পাইকারি ৬০ টাকা কেজি দরে ২৪০০ টাকা মন বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ বাড়লে আরও দাম কমতে পারে। ইতিমধ্যে জেলার বাইরের ব্যবসায়িরাও বাজারে আসতে শুরু করেছেন। জুন মাসের শেষ নাগাদ সাতক্ষীরার আমের বাজার জমজমাট থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সুলতানপুর বড়বাজারে আম কিনতে আসা ঢাকার ব্যবসায়ি আক্তারুজ্জামান জানান, আমরা রাজশাহী, যশোর ও সাতক্ষীরার থেকে প্রতি বছর আম কিনে ব্যবসা করি। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই সাতক্ষীরায় আম কিনতে আসি। কারণ দেশের অন্য জেলার তুলনায় সাতক্ষীরার আম আগে বাজারে আসে। এছাড়া এখানকার আম বেশ সুস্বাদু। সে কারণে দেশের প্রায় সকল বাজারেই ক্রেতাদের মাঝে সাতক্ষীরার আমের একটা আলাদা কদর ও চাহিদা রয়েছে। আগে বাজারে পাওয়া যায় বিধায় ক্রেতাদের কাছ থেকে ভাল দামও পাই। সাতক্ষীরার আম শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে থাকব বলে জানান ওই ব্যবসায়ি।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি জাতের আম পরিপক্ক হওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। আগেভাগে পাড়লে আমের স্বাদ ও গুণগত মান কমে যায়, ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির সুযোগ ক্ষুন্ন হয়। আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের কারণে এখানকার আম অগ্রিম পরিপক্ব হয়। আগাম বাজারে ওঠার কারণে চাষীরা দামও পান বেশি।

তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি জাতের আমের কদর আছে দেশ বিদেশে। ২০১৫ সাল থেকে সাতক্ষীরার আম ইউরোপে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে, যা জেলার অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, সাতক্ষীরার আমের খ্যাতি শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও। সাতক্ষীরার আমের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে এবং বিশুদ্ধ ও নিরাপদ আম বাজারজাতকরণের লক্ষে জেলায় আম সংগ্রহের একটি সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়সুচির আগে অপরিপক্ব আম সংগ্রহ, সংরক্ষণ বা বাজারজাতকরণে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলা থেকে প্রায় ৭০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। রপ্তানিযোগ্য আম নিশ্চিত করতে গুণগতমান রক্ষায় নির্ধারিত সময়ের আগে আম সংগ্রহ বন্ধ রাখা হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কৃষি বিভাগের সহায়তায় এ বিষয়ে জেলাব্যাপি কঠোর নজরদারি থাকবে।

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার আমের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে এবং বিশুদ্ধ ও নিরাপদ আম বাজারজাতকরণের লক্ষে সাতক্ষীরার আম সংগ্রহের একটি সময়সূচি প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। গত ৩০ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত “নিরাপদ আম বাজারজাতকরণ” শীর্ষক এক মতবিনিময় আম সংগ্রহের এই সূচি প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। সূচি অনুযায়ি ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও দেশীয় বৈশাখী আমসহ স্থানীয় জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। আগামী ২০ মে হিমসাগর, ২৭ মে ন্যাংড়া এবং ৫ জুন থেকে আম্রপালি আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করা যাবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!