আসলে কী ঘটেছিল সেদিন জঙ্গলে ? ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া সেই আবু মুছাকে উদ্ধার করেছে গ্রামবাসি। রবিবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে মুছার পরিবারের লোকজন সীমান্তের বকচর নামক স্থান থেকে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
বাঘের আক্রমন থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরে আসা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কৈখালী গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে আবু মুছা (৪১) বলেন, তিনিসহ একই এলাকার কফিলউদ্দিনের ছেলে রতন (৪২) এবং মুছার ভগ্নিপতি একই গ্রামের মনোমিস্ত্রির ছেলে মিজানুর রহমান (৪০) কে মোটা টাকার প্রলোভন দেখিয়ে গহীন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে চোরাই পথে ভারতে গরু আনতে পাঠায় একটি চোরাচালান চক্র। নদী পথে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় রাত হয়ে যায়। এসময় তারা জঙ্গলের পাশে সাতঝিলের খাল নামক স্থানে নৌকা রেখে রাত কাটায়। ভোরে নৌকার উপর একটি বাঘ লাফিয়ে পড়ে। তিনজনের মধ্যে বাঘ প্রথমে টার্গেট করে মিজানকে। এসময় মিজানকে বাঁচাতে রতন বাঘের উপর হামলা করে। বাঘ তখন মিজানকে ফেলে রতনের উপর হামলা করে রতনকে মেরে ফেলে। এরপর বাঘটি মিজানকে নিয়ে জঙ্গলের ভিতরে চলে যায়।
বাঘ আক্রমন করলে মুছা নদীতে লাফিয়ে পড়ে নৌকার তলায় নাক বের করে রেখে প্রাণে বেঁচে যায়। এরপর সে নৌকার নিচে থেকেই কৌশলে নৌকার বাঁধন খুলে ভাটির টানে দূরে চলে যায়। এক সময় আবার উজানে নৌকা বাইতে থাকে। এভাবে দিক ও পথ হারিয়ে ফেলে মুছা। এসময় নৌকার উপর থাকা একটি মোবাইল ফোন আচমকা বেজে উঠলে মুছা সেই মোবাইল ফোন থেকে বাড়িতে খবর দেয়। এরপর থেকে মোবাইল নেকওয়ার্ক টাওয়ার না থাকায় তিনি কথা বলতে পারেনি বলে জানায় মুছা।
আবু মুছা আরো জানায়, ভারতীয় সীমান্তে মাছধরা জেলেরা তাকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে সেদেশের একটি বাড়িতে আশ্রয় দেয়। এরপর তাদের সহযোগিতায় সে সীমান্তের বকচর নামক স্থান দিয়ে দেশে ফিরে আসে। রবিবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে মুছার পরিবারের লোকজন সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে। বাড়িতে ফিরে আসার পর আবু মুছা কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। স্থানীয় চিকিৎসায় তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে ঘটনার বিবরণ দেন।
আবু মুছা আরও জানায়, এই প্রথমবার সে প্রলোভনে পড়ে ভারতে গরু আনতে যায়। দীর্ঘদিন সে বাড়িতে থাকার কারণে অর্থকষ্টে ছিলেন। একই এলাকার মামুন, আজিজুল, সোহরাবসহ কয়েকজন তাদের গরু আনতে পাঠায়। এ চক্রের সাথে তার ভগ্নিপতি মিজানুর এবং রতনও জড়িত ছিল। এদিকে মুছা ফিরে আসার খবরে এলাকাবাসি তার বাড়িতে ভিড় জমায়।
সাতক্ষীরা নীলডুমুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা রবিবার বিকালে আবু মুছাকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে মুছা ওই একই কথা বলছে বলে জানায় সূত্র।
এদিকে পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারি বনসংরক্ষক (এসিএফ) এমএ হাসান জানান, ঘটনার পর থেকেই মুছা তার মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপনে ছিল। সে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করার নাটক করছে। স্থানীয় খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, মুছা ভারতে ছিল না, সে দেশেই ছিল। তবে আত্মগোপনে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সুন্দরবন থেকে তিনজন নিখোঁজ হয় বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। নিখোঁজ তিনজনকে মৎস্যজীবী বলা হলেও তারা মূলত চোরাকারবারি বলে জানায় একাধিক সূত্র।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন