বাগেরহাটের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য দেওয়া বরাদ্দ শিক্ষক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির যোগসাজসে লোপাট হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনেক বিদ্যালয়ে কাজ না করে ভুয়া ভাউচার করে টাকা তুলে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন অনেকে। জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারাও সঠিক ভাবে জানেন না এই টাকা কিভাবে খরচ হয়েছে। এসব অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বাগেরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম।
বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলায় এক হাজার ১৬২ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৯ উপজেলায় মোট ৩৯৬টি বিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ এসেছে। কিন্তু অনেক বিদ্যালয়েই কাজ না করে ভুয়া ভাউচার দিয়ে টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এই অভিযোগে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন মীরু দূর্নীতি দমন কশিন (দুদক) ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা, স্লিপের ৫০ হাজার টাকা এবং সিএফএস-র ১ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। কাজ না করে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শরণখোলা উপজেলায় বরাদ্দ পাওয়া ৪৪টি বিদ্যালয়ে। অন্যান্য উপজেলায়ও বেশ কিছু অনিয়ম রয়েছে।
বিভিন্ন উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, ফকিরহাট উপজেলায় ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২২টি বিদ্যালয়ে বরাদ্দ এসেছে। শিক্ষা অফিস জানিয়েছেন সবগুলো বিদ্যালয়ে কাজ হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
চিতলমারীতে বরাদ্দ পাওয়া ৪৩টি বিদ্যালয়ে কাজ চলছে। তবে বরাদ্দ পাওয়া টাকার কতটুকু কাজ হবে এ নিয়ে শঙ্কা আছে স্থানীয়দের মাঝে।
মোল্লাহাট উপজেলায় ৩৪ বিদ্যালয়ে বরাদ্দ পেলেও শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী কাজ হয়েছে মাত্র ৩১টি বিদ্যালয়ে। তবে এতেও রয়েছে নানা অভিযোগ।
বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৫৫টি বিদ্যালয়ে বরাদ্দ পেলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৩টি বিদ্যালয়ে। অন্য বিদ্যালয় গুলোতে কাজ করা হবে, করোনার কারনে দেরি হচ্ছে।
রামপাল উপজেলায় বরাদ্দ পাওয়া ৩৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৩টি বিদ্যালয়ের কাজ হয়েছে। অর্থ বছর শেষ হলেও অন্যগুলোর কাজ কবে হবে জানে না উপজেলা শিক্ষা অফিস।
মোংলা উপজেলায় বরাদ্দ পাওয়া ১৪টি বিদ্যালয়ের কাজ চলছে।
মোরেলগঞ্জে বরাদ্দ পাওয়া ১০৪টি বিদ্যালয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিস। তবে বাস্তবে কোন কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
কচুয়া উপজেলায় ৪৭টি বিদ্যালয়ে বরাদ্দ আসলেও কাজ হয়েছে মাত্র ১৫টির। অন্যগুলোর কাজ হবে কিনা শংকায় রয়েছে অভিভাবকরা।
অনিয়মের বিষয়ে কথা বলার জন্য শরণখোলা উপজেলা শিক্ষা অফিসে গেলে গনমাধ্যম কর্মী পরিচয়ের পর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলমকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ফোন করলে তিনি ফোন কেটে দেন।
তবে সহকারি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রতন কুমার বল বলেন, ‘এসব দেখার দায়িত্ব তার নয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাই দেখবেন আর্থিক বিষয়গুলো।’
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়মের যে বিষয় উঠেছে সেসব বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমরা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিব।’
বাগেরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম বলেন, ‘ সরেজমিনে গিয়ে মেরামতের কাজ দেখে বিল প্রদানের জন্য সকল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্তপূর্বক এসব অনিয়মের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নিব।’
খুলনা গেজেট/এনএম