বাগেরহাটে শিবু পদ শিউলী (৫০) নামের এক কৃষকের গোয়াল থেকে ৯টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। একমাত্র আয়ের উৎস্য গরু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন পরিবারটি। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত তিনটা ভোর সাড়ে চারটার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের বাড়ি সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মালোপাড়া এলাকায়।
চুরি হওয়া গরু গুলোকে পিকআপে করে নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের। যেকোন মূল্যে চোর শনাক্তপূর্বক গরু উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও স্থানীয়বাসিন্দারা। পুলিশ বলছে, খবর শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে, তদন্ত চলছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক শিবু পদ শিউলী কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মালোপাড়া এলাকার বাসিন্দা। চুরি হওয়া ৯টি গরুর মধ্যে ৫টি গাভী, একটি বড় ষাড় ও ৩টি বাচ্চা রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। ৫টি গাভীর দুধ বিক্রির টাকায় ৪ জনের সংসার চলত।স্বামী-স্ত্রী দুই জনে মিলে এসব গরুর পরিচর্যা করতেন।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, গরু থাকার গোয়াল আছে, খাবারের জায়গা আছে। শুধু গোয়ালে গরুগুলো নাই। মাটিতে বসে গরু শূন্য গোয়ালের দিকে তাকিয়ে আছেন দুই সন্তানের জননী শিল্পি রানী শিউলি। পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ৯টি গরু চুরি হওয়ায় নির্বাক হয়ে পড়েছেন তিনি। আর স্বামী শিবু পদ শিউলী গরুর সন্ধানে সকাল থেকে ছুটছেন বিভিন্ন হাটে-বাজারে। প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনরা শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন শিল্পিকে।
ক্ষতিগ্রস্থ খামারি শিবুর বোন কাকলী মন্ডল বলেন, আমার একটা ভাই। সে তেমন কোন কাজ করতে পারে না। গরু গুলো দেশী জাতের হলেও, ভালই দুধ হত। এই দুধ বিক্রির টাকায় ওর সংসার চলত। এখনতো না খেয়ে মরতে হবে, তাদের। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি যতদ্রুত সম্ভব গরু গুলোকে উদ্ধার করে দিক।
শিবুর প্রতিবেশী শেখ আব্দুল আলী বলেন, প্রায়ই গরু চুরির খবর পাই বিভিন্ন এলাকায়। আমাদের এলাকায় দীর্ঘদিন এসব ছিল না। রাতে শিবুর গোয়াল খালি করে ৯টি গরু নিয়ে গেল। কাল যে অন্য কারও তা নেবে না, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আমরা চাই চোরদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হোক।
শিবুর স্ত্রী শিল্পি রানী শিউলি বলেন, প্রতিদিনের মত রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। রাত ৩টার দিকে একবার উঠেছি, তখনও বাইরের আলো জ্বলছিল। পরে সাড়ে চারটার দিকে ঘুম থেকে উঠে দরজা খোলার চেষ্টা করে খুলতে পারি না। পরে স্বামীকে বললে সে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে দেখে আমাদের ঘরের সামনের দরজা দুটো দড়ি দিয়ে বাঁধা রয়েছে। বাইরের বিদ্যুতের লাইটটিতে লুঙ্গি পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে যাতে আলো দূরে না যেতে পারে। গোয়ালে গিয়ে দেখিয়ে কোন গরু নাই। মশারিটি বিভিন্ন স্থান থেকে কাটা। তখন আমার স্বামী কান্নাকাটি শুরু করেন। পরে তিনি গরু খোজার জন্য বিভিন্ন হাট বাজারে গেছেন।
এ ঘটনায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই ও চুরির কাজে ব্যবহৃত পরিবহন শনাক্তের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো: তৌহিদুল আরিফ।
তিনি বলেন, পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই-বাছাইসহ বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে কাজ করা হচ্ছে। আশাকরি দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
খুলনা গেজেট/ টিএ