বাংলাদেশে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দাবি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপির এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। এনিয়ে নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি। গত অক্টোবর বিএনপির বিশাল এক সমাবেশের পর দলটির বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপির নির্বাচন বয়কটের মাধ্যমের স্পষ্ট হয়ে দাঁড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো আবার ক্ষমতায় আসছেন।
নির্বাচন কমিশন যখন ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বা তাদেরই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানো প্রার্থীরা ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৩টিতে জয়লাভ করেছে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অনেক আসনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থীদের পরিবর্তে তাদেরই মিত্রদের নির্বাচনে দাঁড় করায়।
এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তাদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছরের জন্য বৃদ্ধি করলে এতে অনেক ঝুঁকি আছে। নির্বাচন কমিশন এবারের নির্বাচনে ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে দাবি করলেও- এই পরিসংখ্যান নিয়ে অনেক সন্দেহ আছে। নির্বাচনের দিন অনেক ভোটকেন্দ্রই দিনব্যাপী ফাঁকা ছিল।
নির্বাচনে প্রকৃত বিরোধীদল না থাকায় অনেক ভোটারের ভোট প্রদানে তেমন উৎসাহ ছিল না। ভোটের এ নিম্নমুখী হারের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারের সাম্প্রতিককালের কর্মকাণ্ডের অসন্তোষের প্রতিফলন। সরকারের সমালোচকদের ধরপাকড়, নিপীড়ন, দুর্নীতির উচ্চহার এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার এর অন্যতম কারণ।
বিগত ১৮ মাসের বেশি সময় ধনে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছিল। তারা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দাবি করেছিল এবং তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন। বিএনপির ২৮ অক্টোবর বিশাল সমাবেশ দ্রুত পণ্ড করে দেয় পুলিশ। পরবর্তী সময়ে দলটির প্রথম সারির নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাদের প্রস্তাব দেওয়া হয় তারা নির্বাচনে এলে তাদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
তবে আওয়ামী লীগের এই প্রস্তাব মাত্র একজন গ্রহণ করেছেন। আর প্রস্তাব লুফে নেওয়া মাত্রই তার জামিন হয়েছে এবং তিনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেট পান। তবে বিএনপি তাদের ঐক্য ধরে রাখতে পেরেছেন। যদিও তাদের অনেক নেতা এখনো জেলে আছেন।
এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকল কিন্তু তাদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ক্রমশ বাড়ছে এবং পরপর তিনটি ত্রুটিযুক্ত নির্বাচনের কারণে ভোটারদের মধ্যেও হতাশা গ্রাস করছে।
বিএনপির সহিংসতা বর্জন দেশে ও বিদেশে তাদের ভাবমূর্তি বাড়ালেও দলটি তাদের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এখন রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে, দলটির নেতাই এখন জেলে।
সম্প্রতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপির রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।’ এর মাধ্যমে আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। বিএনপিকে নিষিদ্ধ করা ভুল হবে। এর মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ থেকেই প্রকৃত রাজনীতির বিলুপ্তি হবে না, এতে পশ্চিমা দেশগুলো থেকেও তা বিচ্ছিন্ন হবে। পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ।
বিএনপিকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিলে দেশের আরও মেরুকরণ হবে। যদিও ইতিমধ্যে ছোট ছোট দলগুলো এবারের নির্বাচন বয়কট করেছে। বিএনপিকে নিষিদ্ধ করলে এই ট্রেন্ড বাড়বে। বামপন্থী, ইসলামিক দল এবং কেন্দ্রীয় বিএনপিকে আরও ঐক্যবদ্ধ করবে।
খুলনা গেজেট/ এএজে